মানুষ যা করে তাই কাজ। মানুষের সকল কাজই সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু সংস্কৃতির মধ্যে একটা সংস্কার করার প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে। ইংরেজিতে সংস্কার হলো কালচার। সেখানে কর্ষণের বিষয়টি প্রাধান্য পায়, আর কর্ষণের সঙ্গে উৎপাদনের বিষয়টিও জড়িয়ে থাকে। বাংলাভাষায় সংস্কার মানে শুদ্ধি, ভুল সংশোধন, মেরামতি। প্রকৃতপ্রস্তাবে বৃহৎ ও গূঢ়ার্থে সংস্কৃতি ও কালচার মূলত একই জিনিস, দুই ভাষায় এর দুই নাম। নিহিতার্থ এই যে, কাজটা মানুষের প্রয়োজন ও কল্যাণকে নিশ্চিত করে কি না সেটা দেখা। এ জন্যে কর্ষণ ও সংস্কার করা। আর সেটা নিশ্চিন্ত হলেই তা সংস্কৃতি হয়ে উঠে। সর্বমানবের প্রয়োজনে লাগে না, কল্যাণ করে না কিংবা একজনের কল্যাণ করে তো অন্যের অকল্যাণ ডেকে তেমন কোনও কাজ সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। এমন কি প্রকৃতির অকল্যাণকর কীছু সংস্কৃতি নয়। এই অর্থে বৃক্ষনিধন যেমন সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না তেমনি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা কোনও সাংস্কৃতিক কাজ নয়। সাংস্কৃতিক নয় বলে দু’টিই অমানবিক, অর্থাৎ কোনও বিচারেই মানবিক অর্থাৎ মানুষের করণীয় কাজ নয়।
বন্দুকযুদ্ধের ইংরেজি নাম ক্রসফায়ার। বিভিন্ন ঘটনার সূত্রে প্রতিপন্ন হয় যে, আমাদের দেশে এই বন্দুকযুদ্ধটি সচেতনভাবে সাজানো হয়ে থাকে, যারা সাজান তাতে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার ব্যতীত সামাজিক কিংবা সামষ্টিক কোনও স্বার্থেদ্ধার হয় না, দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ তাতে উপকৃত হয় না, বরং অপকৃত হয়। গত রোববার সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়েছে, মাদক মামলায় জড়িয়ে টাকা দাবি করা হয়েছে, না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনি ধরনের দেদার ঘটনা ঘটছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কীছু কীছু লোকের দ্বারা এবং প্রকারান্তরে আমাদের জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে প্রতিনিয়ত খর্ব করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে এবংবিধ সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কক্সবাজারের চকুরিয়ায় সংঘটিত একটি ঘটনা এরকম : ওমানপ্রবাসী জাফর ১২ মার্চ দেশে আসেন। ২৯ জুলাই তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চকুরিয়া থানা থেকে জানানো হয় ৫০ লাখ টাকা না দিলে জাফরকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। আত্মীয়রা টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রাণভিক্ষা প্রার্থনা করেন। ৩১ জুলাই পটিয়া থানা থেকে এক ইউপি মেম্বারকে ফোন করে জানানো হয়, জাফর চকুরিয়ার ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। এমনি করে ব্যক্তিস্বার্র্থে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলতে পারে না। এমন চলতে থাকলে আস্ত দেশেটাকেই কেউ যদি একটি বিচারবহির্ভূত দেশ বলে বিবেচনা করে তাকে দোষ দেওয়া সঙ্গত হবে কি ? কেউই এমনটা চায় না।
আমরা আমাদের প্রিয় পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি খর্ব হতে দিয়ে জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে বর্বর পরিচিতি পেতে চাই না। এই প্রেক্ষিতে কেবল আশা করতে পারি যে, এর একটি সুরাহা হবে অচিরেই। অন্যথায় দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবার পাশাপাশি আরও অনভিপ্রেত অনেক কীছই সংঘটিত হতে থাকবে। প্রকারান্তরে এই রাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হবে এবং শেখ হাসিনা প্রাণান্তকর চেষ্টায় বিশ্বদরবারে দেশের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি দাঁড় করিয়েছেন তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।