একটি গণমাধ্যমে (১৯ এপ্রিল ২০২৪) লেখা হয়েছে , “দেহ কুপির তেল ফুরাইবে, জ্বলবে না রে বাতি…, অনন্তকাল একলা রইবে, হইবে না কেউ সঙ্গের সাথী…. , জ্বলবে না রে বাতি…।’ তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সঙ্গীতপাগল হাসান স্বশরীরে উপস্থিত থেকে এমন গান আর দরদি কণ্ঠে শুনাবেন না তার ভক্ত শ্রোতাদের। দেহ কুপির তেল ফুরানোর আগেই বাতি নিভিয়ে দিয়েছে ঘাতক বাস।”
বাসচাপা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, “তাকে বহনকারী সিএনজিটি সড়কের একপাশে থাকলেও ঘাতক কোস্টারটি সিএনজিকে চাপা দেয়।” অথচ সংবাদশিরোনাম করা হয়েছে, ‘দুই দিনের মিছা দুনিয়াদারি ছেড়েই দিলেন পাগলা হাসান ॥ ভক্ত-বোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।’ যেনো তিনি ইচ্ছামৃত্যু বরণ করে ইহজগত থেকে বিদায় নিয়েছেন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, হাসান দুনিয়াদারি ছেড়ে চলে যেতে চান নি, তাঁকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বাস তাঁকে মেরে ফেলেছে, এটা একটা প্রকাশ্য খুন, এটাকে কোনও দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এখানে বাসের চালক খুনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
বাংলাদেশে এবংবিধ তথাকথিত সড়ক দুর্ঘটনায় অহরহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। উন্নত দেশে ব্যতিক্রম বাদে এমনটা হতে দেখা যায় না। কারণ সেখানকার যানগুলো আমাদের দেশের মতো ফিটনেসবিহীন অবস্থায় রাস্তায় নেমে চলতে শুরু করে না এবং কোনও অদক্ষ ও যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন চালক যান চালাতে চলকের আসনে আসীন হতে পারে না। প্রথমে এই বিষয়টি (ফিটনেসবিহীন যান রাস্তায় না নামা ও অদক্ষ চালককে যান চালাতে না দেওয়া) আমাদের দেশে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সড়কে খুন হওয়ার ঘটনা রোধ করা যাবে না। এটি কোনও নতুন কথা নয়। অনেকই এবং অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকেই এমন কথা বলছেন, অনেক দিন আগেই এবং এখনও বলছেন। কিন্তু বলাই সার হচ্ছে, প্রসঙ্গটা কেন জানি সব সময়ই ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’ পর্যায়ে পর্যবসিত হয়ে যাচ্ছে, কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।
দেশ উন্নত হচ্ছে, দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে, মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ও ঋণ দু’টিই বাড়ছে এবং বাড়ছে মানুষে মানুষে ধনবৈষম্য। তেমনি বাড়ছে সড়কে খুনের সংখ্যা, এই খুনকে রোধ করতে হবে এবং তবেই বলা যাবে দেশ উন্নত হয়েছে, তার আগে নয়। পরিশেষে বলি, আইনের আওতায় হাসানের খুনির শাস্তি হোক। সড়কে খুন করার প্রবণতা বন্ধ হোক। পাগল হাসান হত্যাকা-ের মতো সকল হত্যাকা-ের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই বলা যাবে দেশ আসলেই উন্নত হয়েছে।