একটি দৈনিকে একটি উদ্ধৃত সংবাদের শিরোনাম ছাপা হয়েছে, ‘বিলাসিতা না হোক, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানটা যেন নিশ্চিত করতে পারে সরকার : সৌমিতৃষা কুন্ডু’। এই ‘সৌমিতৃষা কুন্ডু’ কে, তাঁর কোনও প্রকার বিশিষ্টতাকে গুরুত্ব না দিয়েÑ যদি থাকেÑ এখানে তাঁকে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক বিবেচনা করাই অধিক সঙ্গত হবে এবং তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাদে বাকি তিনটিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকার ‘নিশ্চিত করতে’ পারেন বলে মনে করেন। কিন্তু বিদগ্ধজনের অভিমত এই যে, সরকারের পক্ষে আপাতত সেটা সম্ভব নয়। এর অনেক কারণ আছে, সে-সবের ফিরিস্তি-বাখান দিলে হাজারটা সম্পাদকীয়র বহরেও কুলাবে না। আপাতত একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের বর্তমান সরকার পিতৃসম্পত্তিতে মেয়ে সন্তানকে ছেলে সন্তানের সমান অংশের অধিকারী করে আইন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপক বাধার কারণে নত স্বীকার করে আইন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে করে জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারী স্বাভাবিকভাবেই মৌলিক পাঁচ চাহিদা থেকে ব্যাপকাকারে বঞ্চিত আছেন। তো এমন হলে ‘বিলাসিতা না হোক, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানটা যেন নিশ্চিত করতে পারে সরকার’ সৌমিতৃষা কুন্ডুর সরকারের কাছে প্রত্যাশার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আকাশ কুসুম হয়েই থেকে যাবে, কোনও দিন পূর্ণতা পাবে না। তাছাড়া এই নারী বঞ্চনার কথা বাদ দিয়ে আরও বড় বড় এন্তার সমস্যা তো রয়েই গেছে। অর্থনীতির বিচারে পাঁচটি মৌলিক সমস্যার হাজারটা ডাল-পালা বহুরূপী সমস্যা রূপে বাংলাদেশে উত্তরোত্তর বাড়ছে। সার্বিক বিবেচনায় সমাজসংস্থিতির প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেটা রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা ব্যবসায়ের প্রতিটি স্তরে অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থে পুরো সমাজসংস্কৃতির পরিসরে বেড়েই চলেছে, থামানো যাচ্ছে নাÑ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ও অনিবার্য মূল্যস্ফীতির আকার নিচ্ছে, বর্সান্তকরণে দুর্বৃত্তায়নগ্রস্ত হয়ে উঠছে সমাজ। প্রকারান্তরে পুঁজির অধিক মুনাফা লুণ্ঠনের চরিত্র কার্যকর হয়ে সমাজে সম্পদ অত্মসাতে অভ্যস্তদের চক্র (সিন্ডিকেট) তৈরি করে মানুষের মৌলিক পাঁচ চাহিদা পূরণের সকল আর্থসামাজিক-রাজনীতিক কর্মকা-কে প্রতিহত করে তার বিপরীতে জাতীয় সম্পদ আত্মসাতের মচ্ছব চলছে, অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে উদ্বৃত্তশ্রম শোষণ।
সুতরাং প্রচলিত শোষণভিত্তিক অর্থনীতিকে শোষণহীন অর্থনীতিতে বদলে দিতে না পারলে সরকার যতই চেষ্টা করুন জনগণের কোনও মৌলিক চাহিদাই পুরোপুরিভাবে কখনওই পূরণ করতে পারবেন না, বরং হাজার কোটি টাকা আত্মসাতকারী ঋণখেলাপিকে দায়মুক্তির সুপারিশ করবে দুদক। এমতাবস্থায় অর্থাৎ বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে ‘বিলাসিতা না হোক, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানটা যেন নিশ্চিত করতে পারে সরকার’ এমন প্রত্যাশা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান কথা। কেন না বর্তমান অর্থনীতির নিয়মানুসারে বিশেষ কোনও একজন সম্পদপিপাসু সমাজের লক্ষ মানুষের সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ কুক্ষিগত করে ধনী হয়ে উঠবেন, বাকি সিংহভাগ মানুষ ধনবঞ্চিত হয়ে মৌলিক পাঁচ চাহিদা পূরণে বঞ্চিতই থেকে যাবেন। সমস্যার সমাধানের জন্য আসলে সমাজের ভেতরে মানুষে মানুষে ধনবৈষম্য সৃষ্টি কী করে প্রতিরোধ করা যায়, শ্রীমতি কুন্ডুকে কেবল নয়, দেশের সকল মানুষকেই আগে তা শিখতে হবে।