শহীদনূর আহমেদ ::
চলতি সপ্তাহে সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্র। আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসের কথা জানিয়ে হাওরে অবশিষ্ট বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের আহ্বান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। এছাড়া, হাওরে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা জানিয়ে দ্রুত ধান কাটতে কৃষকদের আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জমিতে ধান কাটার পাশাপাশি মাড়াই করা ধান, খড় হাওর থেকে নিরাপদে নিয়ে রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে দপ্তর দুটি। ধান কাটা ও আগাম বন্যার ব্যাপারে সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিং করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এমন আহ্বানে কৃষকরা হাওরের ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুবিধা হয়েছে। সারাদেশে তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষকদের জন্য তা অনেকটা আশীর্বাদের মতোই। রোদ বেশি থাকায় হাওরে ধান কেটে, সেখানেই মাড়াই ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলছেন তাঁরা। তবে এখনো অনেক হাওরে পাকা ধান রয়েগেছে। আর কয়েকদিন পেলে নির্বিঘেœ ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবেন তারা। এই সময় বৃষ্টি মানেই বিড়ম্বনা। এতে ধানকাটা, মাড়াই ও শুকাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ৯৭ শতাংশ এবং হাওর ও নন হাওর মিলে ৮৪ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে নি¤œাঞ্চলের শতভাগ ধান শেষ হয়ে যাবে তবে উঁচু এলাকার ধান কাঁচা ও আধা পাকা থাকায় আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই হাওরের পাকা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরে ধান রাখার সুযোগ নেই। বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে। তাই বৈরী আবহাওয়ার পূর্বে ক্ষেতের ধান, খলার ধান ও খড় নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ জেলায় আগাম বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জের তথ্যমতে ২ মে পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের বোরো ধান কর্তনের অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলার কৃষকগণকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাওরের অবশিষ্ট বোরো ধান কর্তন এবং কর্তনকৃত ধান ও খড় অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হলো।
উজানে বৃষ্টিপাতের শঙ্কা জানিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানের মেঘনা অববাহিকার স্থানগুলোতে সামগ্রিকভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ৬ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। এতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
অপরদিকে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভায় আগাম বন্যার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, চলতি সপ্তাহে উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টিপাতে বন্যা সৃষ্টি হলেও ২০২২ সালের মতো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যেই হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ ফসল কেটে নিয়ে গেছেন কৃষকরা।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট ধান কাটতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলায় মাইকিং করে কৃষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের সময় ধান কাটার বিষয়ে তথ্য দেয়া হচ্ছে। আশা করছি প্রতিকূল আবহাওয়ায় আর কোনো ক্ষতি হবে না।