শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর এলাকার কৃষক-কৃষাণিরা। এখন তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। এই কর্মব্যস্ত কয়েক লাখ চাষির মধ্যে কাজে অংশ নেওয়া নারীদের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। একদিকে হাওরে যেমন পুরুষ শ্রমিক ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজ করছেন অন্যদিকে ধান মাড়াই ও শুকানোসহ গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন নারীরাও। ধানের এই বাম্পার ফলনে পুরুষের চেয়ে নারীদের অবদান কম নয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলায় আবাদকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির বেশিরভাগ পেকে যাওয়ায় ধান কাটা ও গোলায় তুলতে ৩ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। তবে ধান কাটা, ধান মাড়াই, শুকানো ও বিপণনের কাজে দুই লাখের কাছাকাছি নারী ও শিশু অস্থায়ীভাবে এই মওসুমে শ্রম দিয়ে থাকেন।
জেলার প্রায় মোট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। তারা সরাসরি হাওরে ধান চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জমিতে বীজ বপন, রোপণ ও ধান কাটতে কাজ করেন। অপরদিকে পরিবারের নারী সদস্যরা, গবাদিপশুর জন্য খড় শুকানো, খলায় ধান শুকানো, মরা ধান আলাদা করাসহ গোলায় তুলতে কাজ করে থাকেন।
জেলার শান্তিগঞ্জের খাই হাওর, সদর উপজেলার দেখার হাওর, বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওর ও তাহিরপুরে শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের নিকটবর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওরের বিভিন্ন ক্ষেতে ধান কাটছেন পুরুষরা। আর নারীরা হাওরের কান্দা ও কিত্তায় মেশিনে মাড়াই, খড়-নাড়া, ধানখলা তৈরি, ধান শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের কাজে সাহায্য করছে পরিবারের বিভিন্ন বয়সি শিশু ও বয়স্ক সদস্যরা। এর মধ্যে স্কুলপড়ুয়া বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। অনেক নারী রয়েছেন যারা শুধুমাত্র নিজ পরিবারের কাজেই নয়, শ্রমজীবী হিসেবেও কাজ করছেন।
এলাকাবাসী জানান, বৈশাখী মৌসুমে ধান কাটার সময় হাওরের কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ সবাইকে মাঠে ব্যস্ত থাকতে হয়। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা হাওরের ধান কাটার কাজ করেন। নারীরা সেই ধান মাড়াই, খড় সংগ্রহ, ধান শুকানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও শ্রমিকদের জন্য রান্নার কাজও করে থাকেন নারীরা। কৃষক পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারের নারীরা অস্থায়ীভাবে শ্রমিক হিসেবে হাওরে কাজ করে থাকেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কলাইয়া গ্রামের বাসিন্দা দীপ্তি রাণী দাস। তপ্ত রোদে মাঠে ধান শুকানোর কাজ করছেন। হাওরে ৭ খানি জমি চাষ করেছেন দীপ্তির রাণীর স্বামী। পরিবারের পুরুষ সদস্য ধান কেটে খলায় তুলে দিয়ে গেছেন। প্রচ- দাবদাহের মাঝে ধান শুকানোর পর এই ধান প্রক্রিয়াজাত করে গোলায় তুলেন দীপ্তি ও তার দুই মেয়ে।
দীপ্তি রাণী দাস বলেন, পুরুষরা ধান কেটে খলায় এনে রেখেছে। পরে মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হয়েছে। এখন খলায় ধান শুকাই, ওড়াই, খড় শুকাই। এর পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজও সামলাতে হয় আমাদের।
একই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সরলা। প্রচ- গরমের মধ্যে হাল্কা বাতাসের ধান থেকে চিটা ছাড়াচ্ছেন। সরলা রাণী বলেন, এই কাজ কিশোরী বয়স থেকে করে আসছি। হাওর এলাকায় এই একমাস নারীরা কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকেন। এই বয়সেও ঘরে বসে থাকতে পারিনা। সবার সাথে আমিও কাজ করি।
কৃষিতে নারী শ্রমের ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরে বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। এই বাম্পার ফলনে কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীরদেরও অবদান রয়েছে। হাওরে যে শ্রমিক কাজ করছেন তাদের অর্ধেক নারী বলে জানান তিনি।