স্টাফ রিপোর্টার ::
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক নির্বাহী স¤পাদক বৃহত্তর সিলেটের কৃতী সন্তান হাসান শাহরিয়ারের ৭৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয় বৃহ¯পতিবার। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকাস্থ তার বাসভবন সেগুন বাগিচার এপার্টমেন্টে, জন্মস্থান সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরের বাসায় ও সিলেটে পারিবারিকভাবে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁর জন্ম বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরে। তাঁর পারিবারিক নিবাস তাহিরপুর থানার লাউড় পরগনার বিন্নাকুলি গ্রামে। পিতা মকবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন তদানীন্তন আসামের প্রথম মুসলিম স¤পাদক। তিনি কলকাতার দৈনিক ‘ছোলতান’, সিলেটের সাপ্তাহিক যুগবাণী, যুগভেরী ও সিলেটপত্রিকা স¤পাদনা করেন। তিনি ছিলেন খেলাফত নেতা, আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এমএলএ) ও ভাষাসৈনিক। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাংবাদিকতার পথে এগিয়ে আসেন হাসান শাহারিয়ার। বিশিষ্ট কলামিস্ট হোসেন তওফিক চৌধূরীর অনুজ হাসান শাহরিয়ার। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা শহরে আইন পেশায় নিয়োজিত এবং কলামিস্ট। তৎকালীন সময়ে তিনি দৈনিক পূর্বদেশে সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন।
হাসান শাহরিয়ার ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে তাকে ঢাকার রায়ের বাজারে দাফন করা
হয়।
হাসান শাহরিয়ার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজউইক, পাকিস্থানের ডন, মধ্যপ্রাচ্যের খালিজ টাইমস, চট্টগ্রামের ডেইলি পিপলস ভিউ-এর প্রধান স¤পাদক ও দক্ষিণ ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ড্যাকান হেরাল্ড-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক একজন বিশ্লেষক হিসেবে হাসান শাহরিয়ার দেশে-বিদেশে সমাদৃত ছিলেন। বৈদেশিক সংবাদদাতা সমিতি ওকাব-এর সাবেক সভাপতি, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (সিজেএ)-এর ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন হাসান শাহরিয়ার। তিনিই এশিয়া-প্যাসিফিকের প্রথম সাংবাদিক ছিলেন, যিনি গত ২০০৩ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে মালয়েশিয়ার কুচিং-এ অনুষ্ঠিত সিজেএ সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময়ও তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ২০১২ সালে মাল্টা সম্মেলনে তিনি ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী তাকে ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি অতীত অতীত নয়, যার শেষ ভালো তার সব ভালো, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা, নিউজ উইক-এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় – শীর্ষক বই লিখে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল তাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করেছে। তিনি সিলেট প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
তিনি একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে বহু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ন্যায় ও সত্যের পথ বেছে নিয়ে সাংবাদিকতা পেশাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছেন। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপোস করেননি। এ জন্যে তিনি কয়েকবার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। স¤পাদকের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার স¤পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
হাসান শাহরিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন বা প্রবেশিকা, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। স্কুল জীবন থেকেই হাসান শাহরিয়ারের প্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে এবং সাহিত্য ও সাংবাদিকতার দিকে তিনি ঝুঁকে
পড়েন।