একদা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, এমন একজন ‘বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ’ করেছেন একজন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন। দু’জনই দেশের সম্মানিত ও বিখ্যাত নাগরিক। দু’জনকেই দেশের সাধারণ নাগরিকেরা কমবেশি জানেন, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীরা জানেন ভালো করেই। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, “পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ স¤পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে। রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এই আবেদন জমা দেন।”
এই আবেদন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে এসে দেশে প্রতিষ্ঠিত কাঠামোগত সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাবনাকে অনুপ্রাণিত করছে, বলা যায়, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্যে বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক ঘটনার সূচনা। বিদগ্ধমহলের ধারণা আমাদের দেশের কিছু জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতিষ্ঠিত অসাধুরা মিলেমিশেই এই দেশের সাধারণ লোকজনের স্বার্থসম্পদকে আত্মসাৎ করেন, যেটাকে বিভিন্ন গবেষকরা কাঠামোগত সহিংসতা বলে অভিহিত করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন, প্রশাসনের ভেতরে কিংবা বাইরে উভয় ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতিসহ বৈধ আয় বহির্ভূত উপার্জনের মাত্রা দেশে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। ব্যতিক্রমবাদে আমলা, ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদ ইত্যাদি সুবিধাভোগী কোনও শ্রেণিস্তরের মানুষই এই আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার বাইরে নন, তার বিস্তারিত ফিরিস্তি এখানে দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ সমাজসাংস্থিতিক বাস্তবতা এমনই যে, প্রকার প্রকৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন এইসব আত্মসাৎ কোনও রীতিবিরুদ্ধ বেআইনি কার্যক্রম বলে রাষ্ট্রীয় কার্যবিধি অনুসারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পেলেও এখনও পর্যন্ত কার্যত প্রয়োগক্ষেত্রে কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত হলেও হাতে-কলমে অবাস্তবায়িতই থেকে যাচ্ছে। সকলেই জানেন, দেশে দুর্নীতিবিরোধী আইন আছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আছে, কিন্তু দুর্নীতি না কমে কেবল বেড়েই চলেছে, বেনজীরের মতো কারও বৈধ আয় বহির্ভূত সম্পদসঞ্চয়ের প্রক্রিয়াকে ঠেকানো যাচ্ছে না। এর নিহিতার্থ একটাই : প্রকারান্তরে চাকরি, রাজনীতি, জনসেবা ও ব্যবসার নামে অবাধে সম্পদ লুণ্ঠন চলছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের স্তরে স্তরে এইরূপ অবৈধ আয় উপার্জনকারি ব্যক্তি বিশেষরা রাষ্ট্রের ভেতরে কাঠামোগত সহিংসতা পরিচালনা করছেন, অথচ এই সহিংসতার বিরুদ্ধে কোনও রাজনীতিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না, অভিজ্ঞমহলের ধারণা রাজনীতি স্বয়ং সন্ত্রাসী হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি কোনও আস্থা কাজ করে না, কিন্তু সাধারণ মানুষ আশা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন কাজেকর্মে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে যথাসম্ভব দুর্নীতিদমন করে সে-আস্থা ফিরিয়ে আনবেন। সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে কাজে অগ্রসর হবেন দুর্নীতি দমন কমিশন।