গত বুধবারে (১৭ এপ্রিল ২০২৪) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমএ মান্নান বলেছেন, ‘সুনামগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেক করেছি। আরও কিছু উন্নয়ন চলছে। আরও উন্নয়ন হবে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ তাদের মন সংকীর্ণ থাকায় প্রচার করে আসছিল আমি নাকি সব নিয়ে গেছি শান্তিগঞ্জে। এটা স¤পূর্ণ মিথ্যা। কেন যেন একটি গুজব প্রচার করে আসছিল তারা।’
এ ব্যাপারে সত্য-মিথ্যা নিয়ে আমরা আর ভাবি না। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। সুনামগঞ্জের কোথায় উন্নয়ন হয়েছে আমাদের কাছে সেটা বড় কথা নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আপাতত গুরুত্ব দিতে চাই, সুনামগঞ্জের ভেতরে যে-কোনও স্থানে উন্নয়ন হওয়াকে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জের মতো জলজপ্রকৃতির আশীর্বাদে উদ্ভূত হাওর এলাকার উপযোগী অবকাঠামো তৈরি করা একান্ত আবশ্যক। অর্থাৎ এখানে প্রকল্পিত অবকাঠামোকে হতে হবে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। সে জন্য আমরা এখানে হাওর উন্নয়নে বিজ্ঞানসম্মত প্রাকল্পিক অবকাঠামো নির্মাণে সচেষ্ট হতে আমাদের সকল জাতীয় সংসদের সদস্যকে একযোগে কাজ কারার জন্যে আহ্বান জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ ধান, মাছ, বন, খনিজ ইত্যাদি সম্পদে সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে হাওরগুলোকে সুরক্ষা দিয়ে উন্নত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি রোধ ও সেগুলোর ব্যাপকারে চাষ করার ব্যবস্থা করা, যাতে এখানে উৎপাদিত মাছ রপ্তানি করে অর্থ উপার্জনের উপায় উদ্ঘাটিত হয় এবং পরিকল্পিত বনায়ন ঘটিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষার সঙ্গে হাওরের গ্রামগুলোকে পর্যটনকেন্দ্র করে গড়ে তোলা যায়। বিশাল ভাটিবাংলায় সড়ক তৈরি না করে দ্রুতগামী ও পর্যটনবান্ধব জলযানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করাও এই সার্বিক পরিকল্পনার অঙ্গীভূত হতে পারে। তাছাড়া দেশীয় প্রজাতির ধানকে উচ্চফলনশীল ও অকালবন্যা আবির্ভাবের আগে পরিপক্ক হয়ে যাবে অর্থাৎ কেটে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে এমন ধরণের ধান উৎপাদনের প্রকল্প সফল করে তোলার ব্যাপারটিও ভুলে গেলে চলবে না।
আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জে বাস্তবায়িত সকল উন্নয়ন কার্যক্রমকে হাওরবান্ধব হতে হবে, কারণ এখানে হাওর রক্ষা পেলেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষিত হবে অনায়াসে। পরিশেষে একটি কথা বলি, এখানে বিশেষ করে হাওর উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করা জরুরি, তা-না হলে হাওরাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন সার্থক হয়ে উঠবে না।