মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ ::
জামালগঞ্জে বিএডিসি ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। পানি না দেয়ায় প্রতি বছরই পতিত থাকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ একর কৃষি জমি। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে পানি না দেওয়ায় বিএডিসি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গত ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) বরাবর অভিযোগ করেছেন প্রায় শতাধিক কৃষক।
জানাগেছে, পানি না দেয়ার কারণে চলতি ইরি মৌসুমে ১০ একরেরও বেশি কৃষি জমি পতিত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত বছরগুলোতেও পানি পেতে বিএডিসির ম্যানেজারের খামখেয়ালিপনা ছিল চরম পর্যায়ে। তাছাড়া কাগজপত্রে ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এলাকায় থাকেন না। অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ‘সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ নীতিমালা’ বহির্ভূত কাজ চালাচ্ছেন ম্যানেজারের ছোট ভাই।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে ঘুরে জানাযায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর, আবুরহাঁটি, কদমতলী, গজারিয়া হাটি ও মুসলিম কদমতলী গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষকের ইরি ফসলের জমি রয়েছে চডাবিল হাওরে। প্রতি বছরই এই হাওরের কৃষকরা ইরি মৌসুমে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষকের জমিতে পানি সেচের সুবিধার্থে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিএডিসি’র মাধ্যমে এক যুগেরও বেশি সময় আগে সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ লাইন স্থাপন করা হয়। এতে উপজেলা সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ কমিটির মাধ্যমে ম্যানেজারের দায়িত্ব পান আবুরহাঁটি গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে সামছুন্নুর কামাল। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সামছুন্নুর কামাল ব্যবসায়িক কাজে সারা বছরই এলাকার বাইরে থাকেন। এতে সামছুন্নুর কামাল নিজেই সেচ লাইনের দায়িত্ব দেন তার আপন ছোটভাই আলী নূরকে। আলী নূর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা দাবি করে আসছেন। তার চাহিদা অনুযায়ী যে কৃষক অতিরিক্ত টাকা দেন, তাকেই পানি দেয়া হয়। অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারলে পানি জুটেনা সেই কৃষকের জমিতে। তাছাড়া সঠিক সময়ে পানি দেয়া হয়না বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন কৃষকগণ।
গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বছর ১০ একরেরও বেশি ইরি জমি পানির অভাবে পতিত পড়ে আছে। এই বিষয়ে জমির কৃষক প্রতিবাদ করলে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার আলী নূর কৃষককে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি ও মারমুখী আচরণ করেন বলে জানান একাধিক কৃষক।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক আল আমিন বলেন, পানি সেচ নিয়ে আলীনূর নিরীহ কৃষকদেরকে সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। বয়স্ক মুরুব্বীদেরকেও গালাগালি করেন। প্রতি বছরই পানির সংকটে অনেক জমি পতিত থাকে।
আরেক কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, আমার ১ একর জায়গায় এবছর ধান চাষ করতে পারিনি। আলী নূর পানি না দেয়ার খামখেয়ালিপনাতেই আমার জমি পতিত রয়েছে। আমার মতো অনেক কৃষকই জমি করতে পারেনি। প্রতি বছরই সে পানি দিতে গড়িমসি করে। প্রতি (১ কের) ত্রিশ শতাংশে ১৫শ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও তাকে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এছাড়াও সময়মতো পানি পাওয়া যায় না। এই ম্যানেজারকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান তারা।
অপরদিকে আবুর হাটি গ্রামের মৃত জুনাব আলীর ছেলে কৃষক ইন্নুছ আলী নির্ধারিত ‘ফি’ পরিশোধ সাপেক্ষে তার জমিতে পানি দিতে বললে আলীনূর কালক্ষেপণ করতে থাকেন। প্রায় ১৫ দিন ঘুরানোর পর একাধিক কৃষককে সাথে নিয়ে ইন্নুছ আলী দায়িত্বে থাকা আলী নূরকে জিজ্ঞেস করলে পানি দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। সেখানে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দায়িত্বরত আলীনূর কৃষক ইন্নুছ আলীকে প্রাণে মারার হুমকি দেন। যা পরবর্তীতে ইন্নুছ আলী বাদী হয়ে ম্যানেজার সামছুন্নুর কামাল ও তার ছোট ভাই দায়িত্বে থাকা আলী নূরকে বিবাদী করে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বিএডিসি ম্যানেজার সামছুন্নুর কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ঢাকায় আছি। আমি শুনেছি, আমি ও ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা আমার ছোট ভাই আলী নূরের বিরুদ্ধে প্রায় ১শ জন কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছে জেলা সহকারী সেচ প্রকৌশলী বরাবর। তাছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলাও করেছে ইন্নুছ আলী নামে এক কৃষক। আমাদের উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। যারা পানি চায় আমরা তাদেরকে পানি দিতে প্রস্তুত।
অভিযোগের বিষয়ে আলী নূরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, যারা পানি চায় আমি তাদেরকে অবশ্যই পানি দেই। কেউ অভিযোগ করলে তা স¤পূর্ণ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী কাজী হোসনে আর রাফি জানান, প্রায় ১শ জনের স্বাক্ষরিত জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বিএডিসির ম্যানেজার কামাল ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে রমজান মাসে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঈদের কারণে এটি তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত করে এটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএডিসি সমন্বিত সেচ প্রকল্প জামালগঞ্জ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেয়েছি। জেলা সহকারী সেচ প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছি, তদন্ত করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।