সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ফৌজদারি মামলার সাধারণ সাক্ষীদের আদালতে হাজিরের জন্য তাঁদের যাতায়াত ভাতা দিতে নগদ টাকা চায় পুলিশ। পুলিশ বলছে, সাধারণ সাক্ষীরা যাতায়াত ভাতা না পাওয়ায় নিজে টাকা খরচ করে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে মামলা নি®পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।
মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে এলে কর্মরত পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তর থেকে যাতায়াত ভাতা পান। কিন্তু সাধারণ সাক্ষীদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেই। সাক্ষ্য দিতে না এলে সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন, পরোয়ানা ও জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। আইনজীবীরাও মনে করেন, সাধারণ সাক্ষীদের জন্য ভাতা চালু হলে মামলায় গতি আসবে।
সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দিতে সাধারণ সাক্ষীদের আগ্রহী করতে তাঁদের জন্য যাতায়াত ভাতা চালুর একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।
গত বছরের অক্টোবরে লিখিত প্রস্তাবটি পাঠান রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। প্রস্তাবটি এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। এ ছাড়া কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য দিতে যাতায়াত ভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচারাধীন মামলায় সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার দায়িত্ব থানা ও কোর্ট পুলিশের। তবে সাধারণ সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে এলে খোরাকি বা যাতায়াত ভাতা পান না। পুলিশ সাক্ষ্য দিতে অনুরোধ করলে সাধারণ সাক্ষীরা যাতায়াতের টাকা না থাকার কথা বলেন, সাক্ষ্য দিতে অনীহা জানান। কখনো কখনো পুলিশের কাছেই ভাতা চান। তাই সাক্ষীদের নগদ অর্থ দেওয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দ থেকে ভাতা চালু করা গেলে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে আগ্রহ বাড়বে এবং মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ হবে।
জানতে চাইলে আরএমপির কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে সাক্ষীদের গুরুত্ব রয়েছে। সাক্ষী সময়মতো না এলে মামলার বিচার ঝুলে যায়। তাই তাঁদের ভাতার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো এর সমাধান হয়নি। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৪ ধারায় বাদী এবং সাক্ষীদের খরচ (ভাতা) দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে।
সাক্ষ্য দিতে গেলে পুলিশ, চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তারা পদবি ও দূরত্ব অনুযায়ী বিল জমা দিলে নিজ নিজ দপ্তর থেকে ভ্রমণ ভাতা পান। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, করোনার আগে পুলিশ সদস্যরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে গেলে ভাউচার বা সাক্ষ্য সনদ দেওয়া হতো। সেটি নিজ দপ্তরে জমা দিলে দূরত্ব ও পদবি অনুযায়ী যাতায়াত ভাতা পাওয়া যেত। তবে করোনার পর সাক্ষ্য সনদ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তাই ভাতাও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
ঢাকার নি¤œ আদালতের কয়েকজন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বলেন, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে সাক্ষীদের জন্য ভাতা চালু করেছিল। এর মধ্যে দৈনিক খাবার বাবদ ২০ টাকা, রাতে থাকার জন্য হোটেল খরচ বাবদ ১০ টাকা, মাইলের হিসাব করে আসা-যাওয়ার গাড়ি ভাড়া ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ছিল। তবে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর তা বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুর রশীদ বলেন, একজন শ্রমজীবী মানুষ কাজ ফেলে সাক্ষ্য দিতে এলে সেদিন হয়তো তাঁর সংসার চলবে না। এ জন্য সাক্ষীরা আদালতে আসেন না। তাঁদের সমন বা পরোয়ানা দিয়ে আনতে হয়। সাক্ষী ভাতা চালু হলে মামলায় গতি আসত।
২০১৭ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সাক্ষীদের ভাতা দিতে সরকারের কাছে বাজেট চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে পরে বিষয়টি আর এগোয়নি বলে জানান আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে সাক্ষীদের ভাতার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য একটি বিধিমালা করা প্রয়োজন। বিধিমালা না করতে পারলেও সাক্ষী সুরক্ষা আইনের মধ্যে সাক্ষী ভাতার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। তাহলে সাক্ষ্য নিশ্চিত করা যাবে।