আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট এই দিনে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম তাঁর গানে-কবিতায় দিশেহারা জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। নজরুল সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষিত অকুতোভয় তেজোদীপ্ত এক জীবন যোদ্ধা। তিনি আশৈশব নিদারুণ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও কখনো মনোবল হারান নি। তিনি তাঁর কবিতায় বলেছেন, ‘হে দারিদ্রতা তুমি মোরে করেছো মহান।’
দারিদ্র্যের অভিশাপকে তিনি শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। দারিদ্র্য তাঁর কাছে হয়ে উঠেছিলো অকুণ্ঠিত প্রকাশের অদম্য সাহস; অন্তর্ভেদী দৃষ্টি এবং বাণী ক্ষুরধার। তিনি কণ্ঠে ঢেলেছেন তরল গরল। অমৃত তাঁর কাছে ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই উদ্ধত জিজ্ঞাসা তাঁর, অমৃতে কী ফল? জ্বালা নাই, নেশা নাই, নাই উন্মাদনা। সেই চাঞ্চল্যেই তিনি একাধারে হয়ে উঠেছেন কবি, কথাশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক। বিদ্রোহের মঞ্চে তাঁর প্রবেশ যেন অগ্নিবীণা হাতে করে, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। ‘ধূমকেতু’ নামের রাজনৈতিক কাগজ তিনি প্রকাশ শুরু করেন ১৯২২ সালে। সূচনালগ্নেই ‘ধূমকেতু’র মাধ্যমে তিনি তৎকালীন পরাধীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর বজ্রকম্প দীপ্ততেজ দেখে লিখেছেন, ‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু, আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এ দুর্গ শিরে, উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’ স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের গান ও কবিতা আমাদের প্রাণিত করেছে।
তাঁর চেতনা লোপজনিত অসুস্থতা প্রকাশ হবার কয়েক মাস পূর্বে, ১৯৪১ সালের এপ্রিলে, কলকাতার মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’তে জীবনের শেষ অভিভাষণ পাঠ করতে গিয়ে কবি তাঁর জীবনের লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেন। জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে কঠোর দারিদ্র্য, ঋণ, অভাব দেখে তিনি বলেন, প্রাণের ভেতরের যে সত্য, যে ধর্ম, তাঁর উপর কোনো ধর্ম নাই। বজ্রকণ্ঠে তিনি বলেন, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।
আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে এমন দিনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অমর কীর্তি, রেখে গেছেন তিনি বিশাল সাহিত্য ভান্ডার। নজরুল যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন, তাঁর কর্মে ও আদর্শে। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে বিন¤্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। নজরুল ইসলামের কর্ম ও জীবনাদর্শ হয়ে উঠুক জাতির প্রেরণার উৎস।