কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গল বহন করে আনেনি, অপ্রত্যাশিত এই ঐতিহাসিক ঘটনা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছে এবং প্রকারান্তরে দেশ পিছিয়ে গেছেÑ অভিজ্ঞমহলের কারও কারও মতেÑ কয়েক দশক। আন্দোলন একটি বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া, সমাজ বদলের হাতিয়ার। এই সমাজ বদলের মানে সমাজকে সর্বস্তরশ্রেণির মানুষের জন্য অধিক বাসোপযোগী করে তোলা, অর্থাৎ সুখ, সমৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের সঙ্গে মেধার বিকাশকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া। কোটাবিরোধী আন্দোলনের তেমন কোনও অভীষ্ট ছিলো না, বরং তাতে ছিল মেধাবিকাশে বৈষম্যের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে সেটাকে আইনে পরিণত করে তোলা। বাংলাদেশ এমন কোনও দেশ নয় যে-দেশে শ্রেণিনির্বিশেষে মেধাবিকাশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বরং এখানে মানুষে মানুষে আর্থনীতিক বৈষম্য এমন মাত্রাপর্যায়ে তীব্র হতে তীব্র হচ্ছে যে, মেধাবিকাশের বৈষম্যকে তীব্র করে তোলছে দিন দিন প্রকটাকারে। সুতরাং এমন ধরনের দেশ অর্থাৎ অসাম্যমূলক আর্থসামাজিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মেধাভিত্তিক চাকরির দাবি মানুষে মানুষে সামাজিক ও আর্থনীতিক অন্যায় বৈষম্য, বিরোধ ও নির্যাতনকেই প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল ও সেটা অবশ্যই নৈতিক বিবেচনায় একটি গর্হিত অপরাধ। কারণ একজন রিকসাওয়ালার কিংবা একজন ভূমিহীন গরিব কৃষকের সন্তানের যতই মেধা থাকুক না কেন কোনওভাবেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মেধা তালিকায় নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারবে না, অর্থাভাবে সে তো পড়াশোনাই করতে পারছে না। সুতরাং অনিবার্যভাবে পুঁজিবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্যানুসার সম্পদের প্রতিযোগিতায় তার মেধার পরাজয় ঘটবেই ও বর্তমান পরিস্থিতিতে যেমন ঘটছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকাঠামোর অভ্যন্তরে মানুষের মেধাবিকাশে বিদ্যমান বৈষম্যের এবংবিধ এন্তার কারণ ও বাস্তবতা সংক্রান্ত বিবরণ হাজির করা যাবে। যেমন রাজধানীসহ কয়েকটি জেলা ব্যতিরেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক জেলায় আর্থনীতিক পশ্চাদপদতার কারণে মেধাবিকাশের সুযোগ থেকে সকল স্তরের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এবং দেশের নারীরা মেধাবিকাশে পিছিয়ে আছেন সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে। রাজধানীসহ অন্য কয়েকটি শহরে বা জেলায় যেমন মেধাবিকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে তেমন সুযোগবঞ্চিত প্রান্তিক জেলাগুলোতে ছড়িয়ে না দিয়ে দেশব্যাপী সকল স্তরশ্রেণির জন্যে একক মেধাভিত্তিক চাকরির অধিকার প্রতিষ্ঠা কার নীতিগতভাবে শিষ্ট তো নয়ই বরং অন্যায় ও সামাজিক নির্যাতনকে নীতিগতভাবে প্রতিষ্ঠা করা। এটা হতে পারে না। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, এমন নীতি নীতিগতভাবে পরিহার করা হবে অচিরেই। এ প্রেক্ষিতে যে-কেউ দাবি করতে পারেন, চাকরিতে জেলা কোটা ও নারী কোটা বহাল করা হোক এবং সে-টা অসঙ্গত হবে না, বরং নৈতিক বিবেচনায় সঙ্গত হবে, না হওয়াটাই হবে অন্যায়।