বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তীকে সংবর্ধনা দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট। শুক্রবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে সংবর্ধনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষিত প্রজন্মের কাছে আমরা সম্মান চাই। আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম রক্ত দিয়ে, ইজ্জত দিয়ে। আমাদের কাছে দেশটাই বড়ো ছিল। কোনও কিছু পাওয়ার বিনিময়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘রাজাকার’ স্লোগান শোনা আমাদের জন্য বড়ো অসম্মানের। তাদের মুখে এটা শোনার আগে আমাদের মরে যাওয়া উচিত ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করিনা। সম্মান আশা করি। আর আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী আরো বলেন, আমি যখন মুক্তিযুদ্ধে যাই তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। আমার বড় বোন তার দুই বাচ্চা মায়ের কাছে রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন আমাকে নিয়ে। আমরা মুজিবনগর সরকারের অধীনে কাজ করেছি। আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছি। কিছু পাওয়ার আশায় করিনি। যখন ভয়াল ’৭৫ আসে, জাতির পিতা ও তার পরিবারকে সপরিবারে হত্যা করে তখন আমরা পরিচয় গোপন করে চলাফেরা করেছিলাম। আমাদের এই জায়গা থেকে সম্মান দিয়েছেন জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন প্রধানমন্ত্রীকে মারার জন্য দুষ্কৃতকারীরা আন্দোলনের নামে নাশকতা করেছে। কিন্তু তারা তাকে মারতে পারেনি। এখন আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তব্য তার পাশে থাকা। তার নেতৃত্বে দেশের শান্তি ও কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। যারা আন্দোলনের নামে নাশকতা ও অরাজকতা করেছে তাদের প্রতিরোধ করতেই হবে।
বিএনপি-জামায়াতের আমলে অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির সময় আমাকে বলা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য টাকা দিতে হবে। আমি বলেছিলাম টাকা দিয়ে আমি সার্টিফিকেট নেবনা। আমরা নেইনি। পরে শেখ হানিসনার সরকার সম্মান দিয়ে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুর্ফিয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার হাজী নূরুল মোমেন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্বারী ওয়াহিদ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রেশন পাচ্ছেন কিন্তু সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রেশন পাচ্ছেন না, তাদের মধ্যেও রেশন চালু করা জরুরি প্রয়োজন। তারা বলেন, ২০ হাজার টাকা ভাতায় দিন চলে না। প্রতি মাসে রোগ বালাইসহ নানা সমস্যায় অনেক টাকা খরচ হয়। পরিবার নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। মুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড হলে ‘এসি’ চালু করতে হবে । এসি চালুর ব্যবস্থা করা জরুরি। তারা বলেন, বীর নিবাস নির্মাণ হয়েছে নি¤œমানের ইট, বালু-পাথর, রড ও সিমেন্ট দিয়ে। এখনই প্লাস্টার খসে পড়ছে। বীর নিবাস নির্মাণে টেকসই উন্নয়ন দরকার। মুক্তিযোদ্ধাগণ আরও বলেন, আমাদের দাবি ছিল বিদ্যুৎ বিল ২শত ইউনিট পর্যন্ত মওকুফ করার। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সমস্যা সমাধানের দাবি আমাদের।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমদাদুল হক শরীফ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম সেফু, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স¤পাদক অ্যাড. মাহবুবুল হাছান শাহীন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকসেদ আলী, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ প্রমুখ।