সুনামগঞ্জ দেশের অন্যান্য অনেক জেলা থেকে সমাজসাংস্থিতিক উন্নয়নের দিক থেকে বেশি মাত্রায় পিছিয়ে আছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিভিন্ন আর্থনীতিক খাতে তো পিছিয়ে আছেই, সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার কার্যক্রম থেকে। এখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, এখন ভর বর্ষার সময়েও হাওরের জলে মাছ রীতিমতো দুর্লভ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ জলে ভরপুর হাওরাঞ্চলকে ‘জলের মরুভূমি’ বলতে শুরু করেছেন। কারণ এখানে পুকুর ভিন্ন প্রাকৃতিক জলাধারগুলো বলতে গেলে প্রায় নিষ্ফলা হয়ে উঠেছে। হাটে-বাজারে বিল-হাওরের মাছ এখন আর পাওয়া যায় না। তবে পুকুরের মাছ পাওয়া যায়।
তাছাড়া এখানে স্বাভাবিক বন্যার বদলে অন্য একটি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে, যেটাকে অনেকেই জলাবদ্ধাজনিত বন্যা বলে অভিহিত করছেন এবং বলা বাহুল্য এই প্রাকৃতিক ঘটনা যতোটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানবঘটিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরের অভ্যন্তরে অপরিকল্পিত বাঁধনির্মাণ এর প্রধান কারণের একটি। অন্যটি নদী-খাল খনন না করার জন্যে নদী-খালগুলো ভরাট হয়ে দখল হয়ে গিয়ে কিংবা মরে গেছে অথবা বেঁচে থাকলে ক্ষীণতোয়া ও অগভীর হয়ে পড়েছে। ফলে স্বাভাবিক জলপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় উত্তরের জল তড়িতে দক্ষিণে সরে যেতে পারে না বলে বৈশাখ শুরুর অব্যবহিত আগে পরে অকাল বন্যা এখানে ফসলডুবির কারণ হয় ও ভরা বর্ষায় জলাবদ্ধ বন্যার সৃষ্টি করে ভয়াবহভাবে মানুষের দুর্ভোগর উৎস হয়ে উঠে।
অনাদিকাল হতে বন্যা সুনামগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিয়েছে, এতে জমিন হয়েছে উর্বর, ফসল ফলেছে সহজে। কিন্তু বর্তমানে এই বন্যা আর আশীর্বাদ হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে না, মূর্তিমান অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই অভিশাপকে ঠেকাতে হবে। বন্যাকে সুনামগঞ্জের জন্য আর্থনীতিক উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত করতে হবে, করে তোলতে হবে আশীর্বাদ।