মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতপ্রস্তাবে মানুষ প্রকৃতির পরিসরে প্রপন্ন। প্রকৃতি না থাকলে মানুষের কোনও আশ্রয় থাকবে না। মানুষের উদ্ভব প্রকৃতি থেকে এবং মানুষ বেঁচে থাকে প্রকৃতির পরিসরে। মানুষ প্রকৃতিকে নিজের বেঁচে থাকার আবশ্যকীয় উপকরণ হিসেবে ব্যবহার না করে থাকতে পারে না। প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই মানুষ বেঁচে থাকবে। প্রকৃতিকে মেরে ফেলার একটাই অনিবার্য ফল মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করা। চূড়ান্ত অর্থে এই পৃথিবীতে মানুষের একমাত্র কর্তব্য হলো নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতিকে ব্যবহার করা ও সেই সঙ্গে প্রকৃতির বাঁচা-বাড়াকে অনিবার্য করে তোলা।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষশিরোনাম ছিলÑ “তাহিরপুরে বড়গোপটিলা পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন”। সংবাদ পাঠে জানা যায়, ওই এলাকায় পাহাড় কাটা ছাড়াও রাজনীতিকভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র ড্রেজার মেশিন দিয়ে যাদুকাটা নদী থেকে প্রতিদিন বালু-পাথর আহরণ করছে। পাহাড় কাটা ও ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলন দু’টিই প্রকৃতিকে মেরে ফেলা অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ক্ষুণœ করার মনুষ্যকৃত অপকর্ম। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে উঠলে পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক প্রপন্নতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যেমন যাদুকাটা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলনের প্রত্যক্ষ ফল নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০টি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে, যে গ্রামগুলো অদূর ভবিষ্যতে নদীভাঙনের কবলে পতিত হয়ে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
অতএব যেসব চক্র পাহাড় কেটে, নদীর তলার বালু-পাথর তোলে প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে দিয়ে সভ্যতা ও মানবপ্রজাতিকে বিপন্ন করে তোলছে তারা সভ্যতা ও মানবজাতির শত্রু। এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে এবং প্রতিরোধ করাটা মানুষ হিসেবে মানবপ্রজাতিকে রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনের নিরীক্ষে কতটা অবশ্য পালনী কর্তব্য তা কাউকে বলে বুঝানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবতে বলছি। এখনই প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করার এমন মানবতাবিরোধী অপকর্ম বন্ধ না হলে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হবে অথবা বলা যায় মানুষ অনিতিক্রম্য সমস্যায় আক্রান্ত হবে।