হাওর এলাকার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পৃথক তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে। এটি একটি আশার কথা। এই সংবাদটি সত্যিকার অর্থে হাওরাঞ্চলে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জে, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সুপারিশ কার্যকর হলে হাওরবাসী এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারবে যে, তাঁদের বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে সে-অনুযায়ী ব্যবস্থা করার কেউ না কেউ আছেন জাতীয় সংসদে। তাছাড়া এতে অন্তত জাতীয় সংসদের জনসম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘অর্ধেক মানুষ মরে গেলে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা বলে ঘোষণা করা হবে’ কোনও সরকারি কারিন্দার মুখে এমন কথা শোনার দুর্ভাগ্য আর কখনও হবে না, হাওরের বিপন্ন মানুষদের জন্য একটু না একটু হলেও নিরাপত্তা তৈরি হবে। সরকারি কারিন্দার কথা মতো জেলার অর্ধেক মানুষ অর্থাৎ প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর অপেক্ষায় এবং বাকি অর্ধেককে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ধুঁকে ধুঁকে ভোগান্তির জীবন কাটানোর জন্য বেঁচে থাকতে হবে না। এইটুকু উন্নতি জেলার জন্য কম কীসে।
প্রতি বছরই কোনও না কোনওভাবে হাওরাঞ্চল কোনও না কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিপতিত হয়। হাওরাঞ্চলে কোনও না কোনও দুর্যোগ নিয়তি নির্দিষ্টতার মতো অবধারিত। এখানে ঝড়, অতিবৃষ্টি, বন্যা, অকালবন্যা, হাওরডুবি, ফসলহানি, নদীভাঙন, আফালের কবলে পড়ে গ্রাম-বসতভিটার সলিল সমাধি, অনাব্যতা, খরা, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান আছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর আর একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবির্ভূত হয়েছে।
এইসব সমস্যা অনবরত লেগে থাকার কারণে হাওরাঞ্চলের মানুষের, বিশেষ করে কৃষকদের, আর্থনীতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক থাকে প্রায় সব সময়ই। স্বাধীনতাপূর্ব কিংবা স্বাধীনোত্তর কালে কোনও সময়েই হাওরাঞ্চলে তেমন কোনও উন্নয়ন সংঘটিত হয়নি যার দরুণ এখানকার কৃষকদের মেরুদ- একটু শক্ত হতে পারে। ফলে সম্পন্ন কৃষক ক্রমাগত গরিব কৃষকে ও গরিব কৃষক সর্বহারা ক্ষেতমজুরে পরিণত হচ্ছে। তারা বাঁচার তাগিদে ভিড় করছে গিয়ে শহরে। এভাবে চলতে থাকলে আর দশক দুয়েকের মধ্যে হাওরাঞ্চলে কৃষক বলে কোনও শ্রেণি অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয় না।
আমরা আশা করব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশানুসারে হাওরাঞ্চলের জন্য অচিরেই পৃথক তহবিল গঠন করা হবে। হাওরাঞ্চলের জন্য এটি একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সুবিবেচনাপ্রসূত প্রস্তাব।