এই সময়ে, জঙ্গিবাদের উৎপাত যখন দৃশ্যমান, তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন ঐতিহাসিক পর্যায় অতিক্রম করছে। এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রতিটি ক্ষেত্রে চাই দূরদর্শী রাজনীতিক, পরিচালক ও কর্তব্যসাধনে সক্ষম নেতা। নেতাকে হতে হবে সমাজ বিকাশের সাধারণ প্রেক্ষিত নির্ণয়, সঠিক রাজনীতিক কর্মধারা রচনা করা ও তার সফল বাস্তবায়নে সনিষ্ঠ ও পারদর্শী। তাছাড়া রাজনীতিক পার্টির নেতা বা কর্মীকে হতে হবে সমগ্র জনগণের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতিক কর্ম পরিচালনায় বিশেষভাবে পারঙ্গম। আমরা প্রায়শ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে এমন সব রাজনীতিক নেতা-কর্মীর কর্মকান্ডের বিষয়ে জ্ঞান লাভ করি, ঘটনা এমন যে, হয় তো কোনও গায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কার-মেরামতের বরাদ্দ থেকে বখরা না পেয়ে ক্ষমতাসীন পার্টির রাজনীতিক নেতা-কর্মী ক্ষমতাবলে কাজ বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন। এমন হলে নীতিগতভাবে পার্টির ঘোষিত নীতির ব্যত্যয় ঘটে। তাই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পার্টি নেতৃত্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন, বিশেষ করে বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনায়, অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি বিষয়, কীছুতেই অবহেলা করা সমীচীন হবে না।
গতকালের সুনামকণ্ঠে শীর্ষশিরোনাম ছিল, “আ.লীগের কমিটিতে স্থান চান প্রবাসীরা : তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান স্থানীয়দের অগ্রাধিকার”। বলা হয়েছে, “প্রবাসে সক্রিয় আছেন এমন নেতারা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেতে তদবির শুরু করেছেন।” বাংলাদেশের রাজনীতিক সংস্কৃতিতে “প্রবাসীদের পার্টি কমিটিতে স্থান লাভের বিষয়টি” সাম্প্রতিককালে প্রবল হয়ে উঠেছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তারা ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ করেছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সফলতাও লাভ করেছেন যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তারা স্থায়ী নাগরিক এবং সচ্ছল জীবনের অধিকারী। কালেভদ্রে স্বদেশের মাটিতে এসে পা রাখলেও স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসীরা জেলা কমিটিতে স্থান পেলে রাজনীতিতে নিয়মিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এমতাবস্থায় জরুরি প্রশ্ন হলো প্রবাসীদের পক্ষে “রাজনীতিতে নিয়মিত হওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা কি আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে স্থান লাভের ছাড়পত্রের হিসেবে মর্যাদা পেতে পারে” এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকরা কী নীতি গ্রহণ করবেন এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু পার্টিতে প্রশ্নটি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি তো আছেই। কমিটিতে স্থান লাভের অভিপ্রায়ে প্রবাসী নেতাদের তৎপরতায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা হতাশা ও ক্ষোভ বিদ্যমান আছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এমন একটা রাজনীতিক দল, যে দল বর্তমানে সকল রাজনীতিক, আর্থনীতি সংকট সকলভাবে মোকাবেলা করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে একটি সয়ম্ভর, সফল ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। ইতোমধ্যে তার লক্ষণ পরিস্ফূট হতে শুরু করেছে।
এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, তারাই জেলা কমিটিতে থাকবেন বা স্থান পাবেন, যারা রাজনীতিতে ব্যাপক সৎ, সনিষ্ঠ ও আত্মনিবেদিত, যারা রাজনীতিক কর্মপটুতা ও নৈতিকতা গুণে সবচেয়ে ভালোভাবে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে জনস্বার্থে পরিচালনার কাজ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া তাদেরকে হতে হবে জনপরিচর্যায় সফল এবং গড়িমসির বিরুদ্ধে সুদৃঢ় সংগ্রামে ব্রতী।