গত মৌসুমে শিলাবৃষ্টি ও ফসলরক্ষাবাঁধ ভাঙনের ফলে ব্যাপকাকারে ফসলহানির পর জেলাবাসীর পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জকে সরকারিভাবে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি উঠেছিল। কিন্তু কী কারণে জানি না সে দাবি ‘অরণ্যে রোদন’ হয়ে সুনামগঞ্জের সর্বহারা কৃষকের বুকে এখন হাহাকার হয়ে বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধানবিক্রয়ের সরকারি কার্যক্রম বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়ে কৃষকেরা আরেক দফা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমতাবস্থায় মরার ‘উপর খড়ার ঘা’ খাওয়া কৃষকদের শেষ ভরসা অগতির গতি রাজনীতিবিদদের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককুলের প্রত্যাশা উজ্জীবিত হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে সুনামগঞ্জের রাজনীতিকরা অসহায় কৃষককুলের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন নি। এ সম্পর্কে গতকালের সুনামকণ্ঠের শীর্ষশিরোনাম ছিলÑ “ফসলহারা মানুষের পাশে নেই রাজনীতিকরা”। প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ “সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অসহায় গরিব-দুখীদের পাশে দাঁড়ালেও এ ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জ। এখন পর্যন্ত তাদের সহায়তা তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি।” পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি তাঁর ঐচ্ছিক তহবিল থেকে ৩ লক্ষ টাকার চেক অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করেছেন এবং বলেছেন, তার সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এই সহায়তা অনেকটা ব্যক্তিগত দান-খয়রাতের মতো একটি বিষয়। এরকম একটা সহায়তা অব্যাহত রেখে ক্ষুধাপিড়িত দুর্গত একটি জেলার বিপন্ন মানুষজনকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করা যে যায় না, সেটা বুদ্ধিখরচ করে হৃদয়ঙ্গম করতে হয় না। প্রকৃতপ্রস্তাবে এই জেলার দুর্গত মানুষকে বিশেষ করে ফসলহারা কৃষককুলকে রক্ষার জন্য চাই পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি সহায়তা। সে জন্য আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হোক। আমাদের রাজনীতিবিদরা দলমতের বিভেদ ভুলে সুনামগঞ্জকে দুর্গত জেলা ঘোষণার কাজে মনোনিবেশ করুন। আর জেলার যে সব সরকারি দপ্তর ফসলহানির বিষয়ে মনগড়া হিসেব সরকারের উঁচু মহলে পাঠিয়েছে প্রেরিত প্রতিবেদনে ফসলের ক্ষতি দেখিয়েছেন মাত্র পনেরো শতাংশ, তাদেরকে যথাযথ হিসাব প্রেরণে বাধ্য করুন।