গত রোববার (২৬ জুন ২০১৬) দিরাই উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে দুর্যোগ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে বক্তারা সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ততার বা শিলাবৃষ্টি ও বন্যার জলে হাওরডুবে ফসলহানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেই হাওরাঞ্চলে ফসলহানি ব্যাপকতা পায় বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
জানা কথা, শিলাবৃষ্টিতে ফসলহানি বা ফসলের ক্ষতি প্রতিরোধ করার কোনও প্রাযুক্তিক ব্যবস্থা আপাতত আমাদের দেশে নেই। বন্যার কারণে ফসলহানি প্রতিরোধ করার প্রযুক্তি বা প্রকৌশল এ দেশে অজানা নয়। প্রায়োজিক দুর্বলতা অর্থাৎ বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জটিলতা বা দুর্নীতি অবলম্বনের কারণে হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষার প্রকল্প কখনই সার্থক হয়ে ওঠে না। দৈনিক সুনামকণ্ঠে “আকস্মিক বন্যা, ভূমিকম্প ও বজ্রপাত বিষয়ক সেমিনার” শিরোনামের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেমিনারের বক্তারা হাওরাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির জন্যে প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট দুর্যোগকেই দায়ী করেছেন। ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণ যেখানে মাঘ কিংবা ফাল্গুন মাসের মধ্যে শেষ করা সমীচীন, সেখানে বৈশাখ মাসেও কাজ শেষ হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কিছু প্রকৌশলী ও পিআইসি (যারা বাঁধের কাজ করান) মিলে ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয় না, ফলে বন্যা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় না। বন্যার পানির ধাক্কায় বাঁধগুলো ভেঙে যায়, ফসলহানি ঘটে। এটা প্রকৃতপ্রস্তাবে কোনও প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বাঁধের বরাদ্দের টাকা মেরে খাওয়ার লোভ থেকে জাত মানুষের তৈরি বিপর্যয়।
হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষাবাঁধ ভাঙার এই মানবসৃষ্ট বিপর্যয় তখনই প্রতিরোধ করা যাবে, যখন পাউবো’র প্রকৌশলী ও পিআইসিদের বাড়তি অর্থ উপার্জনের লোভ তাদের অন্তর থেকে ব্যবচ্ছেদ করে অপসারণ সম্ভব হবে, অন্যথায় নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির ব্যবস্থায় তা কখনই সম্ভব নয়। সুতরাং বাঁধনির্মাণের সঙ্গে প্রকৃত কৃষককে সম্পৃক্ত করে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা বাঁধ নির্মাণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পরীক্ষা করা যেতে পারে।