গত সোমবার দৈনিক সুনামকণ্ঠে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) বাস চলাচলের কারণে যাত্রীদুর্ভোগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে স্বাধীনোত্তরকাল থেকে এখন পর্যন্ত পুরনো ও অনুপযোগী বাস চলে আসছে, তাতে আসনসংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠানো-নামানো হয় এবং “দীর্ঘ দিন ধরে এই যাত্রী দুর্ভোগ চলে আসলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।” ফলে যাত্রীসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশে কার্পণ্য করছেন না, সুনামগঞ্জে যুবসমাজ মানববন্ধন করছেন।
বিগত সাড়ে চার দশক কাল থেকেই সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে লক্করঝক্কর মার্কা বাস চলাচল করছে। বলা হয় এই সড়কে বাসযাত্রীসেবার তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। যদিও জনবান্ধব বর্তমান সরকারের আমলে ইতোমধ্যে সড়কের যথেষ্ট উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে নতুন নতুন সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু পুরানো যাত্রীপরিবহনগুলোকে বাতিল করে নতুন যাত্রীপরিবহনযান নামাতে মালিত পক্ষ প্রস্তুত নন। পরিবহন বাণিজ্যে নতুন পুঁজি বিনিয়োগে তাঁরা উৎসাহী নন। বাসমালিক পক্ষ এমন শক্তিধর যে, তাঁরা নতুন কোনও মালিককে নতুন, আধুনিক ও উন্নত সেবাপ্রদায়ী যান নিয়ে সড়কে নামতে দিচ্ছে না। এমন কোনও অদৃশ্য চক্রের কারসাজিতে সরকার ও রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সড়কে যান নামানোর প্রক্রিয়াকে স্থবির করে রেখেছেন। বাংলাদেশে পরিবহন বাণিজ্যের রাজত্বটিকে ব্যক্তিমালিকানার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সে জন্য রেলের উন্নয়নটিকেও স্থবির করে রাখা হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির কার্যকর প্রয়োগের এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থাৎ পরিবহনবাণিজ্যে বিরাষ্ট্রীকরণ নীতির প্রয়োগ। এই নীতিকে বাতিল করে পরিবহন বাণিজ্যে রাষ্ট্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হলেই কেবল প্রতিবেদনে বর্ণিত যাত্রীদুর্ভোগ কমতে পারে, অন্যথায় নয়, যেহেতু বাস মালিক পক্ষ বিদ্যমান যাত্রীদুর্ভোগজনক অবস্থার কোনও পরিবর্তন চাইছেন না। আমরা কেবল আশা করতে পারি, বাসমালিক পক্ষ যাত্রীদের প্রতি সদয় হয়ে পুরনো অযোগ্য বাস সড়ক হতে প্রত্যাহার করে নতুন উন্নতমানের বাস সড়কে নামাবেন কিংবা সরকার বাহাদুরই এটা (সড়কে উন্নত বাস নামানো) করবেন। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিকল্প ক্রিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা যাবে না। সড়কে নতুন ও উন্নতমানের বাস নামাবেই।