শীত এসেছে। এসেছে অতিথিরাও। প্রতি শীতের মৌসুমেই ওরা আসে। বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে এসব অতিথি পাখি আসে তীব্র শীত থেকে বাঁচার জন্য। সুনামগঞ্জসহ এদেশের হাওর-বাঁওর-জলাশয়ে তারা আশ্রয় নেয়। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় নিজ নিজ দেশে। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের দেশ, বাংলাদেশের প্রকৃতি নিরাপদ মনে করে বলেই এসব পাখি আসে।
জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে আসা এসব অতিথির জীবন এখন আর নিরাপদ নয়। কখন যে এদের ছোট্ট বুকটা গুলিবিদ্ধ হবে, অথবা শিকারির ফাঁদে আটকা পড়বে সেটা ওরা জানে না, জানতে পারে না। কিছু অসাধু শিকারি সিন্ডিকেট করে কারেন্ট জালের ফাঁদ আর বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করে থাকে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ড। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে পাখি নিধনে তৎপর থাকে শিকারী সিন্ডিকেট চক্র।
পাখিদের নির্ধারিত কোনো সীমানা নেই। তাই অনায়াসেই ছুটে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। খাদ্যের সন্ধানেই ব্যস্ত থাকে সারা সময়। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, উপ-মহাদেশে ২ হাজার ১০০টি প্রজাতির পাখি আছে। তবে এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩শ প্রজাতির পাখি হিমালয় পেরিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আমাদের দেশে আসে। ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা এন্টার্কটিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে এরা পাড়ি জমায় দক্ষিণের কম শীতের দেশে। প্রকৃতিগতভাবেই এ পাখিদের শারীরিক গঠন খুব মজবুত। এরা সাধারণত ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়ে যায়। আমাদের দেশের পরিবেশের সুরক্ষা এবং পরাগায়নের ক্ষেত্রে এসব অতিথি পাখির অবদান অনস্বীকার্য। তাই দেশের জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে অতিথি পাখি নিধন বন্ধে সরকারকে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার স্বার্থেই পাখি নিধন বন্ধ করা দরকার। আর, এই দরকারি কাজটা করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাখি নিধন বন্ধে প্রচলিত আইন কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।