বালু-পাথর উত্তোলনে সকল প্রকার যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না ধোপাজান-চলতি নদীতে। বরং মহাসমারোহে পরিবেশবিধ্বংসী বোমামেশিন নামক এক ধরনের উত্তোলনকারী মেশিনের ব্যবহার করছে একটি সিন্ডিকেট। বোমামেশিন ব্যবহারের ফলে বালু-পাথর মহাল ধোপাজান-চলতি নদী এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হলেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। নদীতে ভাসমান এই যন্ত্রটির সাথে সংযুক্ত পাইপ বা সিলিন্ডার ৮০-৯০ ফুট গভীর থেকে বালু-পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত হয়, যার ফলে ঘটে থাকে নদীভাঙন, ভূমিক্ষয় বা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ার মতো নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ‘মনুষ্য’ঘটিত কর্মকান্ডে পরিবেশের এই বিপর্যয়ে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘ধোপাজানে বোমামেশিনের তান্ডব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের অন্যতম বালু-পাথর মহাল ধোপাজান। সরকারিভাবে নানা নিয়ম-নির্দেশনা অনুযায়ী ধোপাজান-চলতি নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন করার কথা। যা অনেকটাই কেবল নথিতে সীমাবদ্ধ। নিয়মের কোনরূপ তোয়াক্কা না করে এ নদীতে সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররা নিজেদের খেয়াল-খুশিতেই উত্তোলন করে আসছে বালু-পাথর।
প্রকৃতপক্ষেই ধোপাজান-চলতি নদী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বোমামেশিন এক আতঙ্কের নাম। দীর্ঘদিন ধরেই বোমামেশিন সিন্ডিকেটের আগ্রাসনের ব্যাপারে অভিযোগ নদীর দুই তীরের বাসিন্দাদের। কিন্তু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ভাঙনের কবলে পড়া ভিটা নিয়ে কথা বললেও শুরু হয়ে যায় অত্যাচার। বোমা মেশিনের আগ্রাসনের মাত্রা বাড়তে থাকলেও সেদিকে কোন খেয়াল নেই দায়িত্বশীলদের। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, সিন্ডিকেটের দাপটের কাছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ সত্যিই অসহায়ত্ব বরণ করেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র দায়ের করা একটি মামলার রায়ে উচ্চ আদালত বোমামেশিন যন্ত্রটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এরপরেও থেমে নেই এর ব্যবহার। পরিবেশ সংরক্ষণে সারা বিশ্বই যখন সোচ্চার, সেখানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশে প্রকৃতি ও জনস্বার্থ বিরুদ্ধ এসব কর্মকান্ড ভীষণ উদ্বেগের। নানাক্ষেত্রেই আইন অমান্য করে অপসংস্কৃতি যে এদেশে স্থায়ীরূপ পরিগ্রহ করে চলছে, ধোপাজান-চলতি নদীতে নিষিদ্ধ বোমাযন্ত্রের ব্যবহারেই তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, প্রশাসন দৃঢ়পদক্ষেপ নিলে বোমামেশিন ব্যবহারকারী সিন্ডিকেট যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের প্রতিহত করা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়।