অভিযোগ উঠেছে ক্যানসার রোগীর চিকিৎসার আবেদনপত্র ফিতাবন্দি করে রেখে দিয়েছেন ৩ মাস। কর্তার খোঁজে গেলে তাঁর অফিস সহায়ক এই ৩ মাস যাবৎ ‘আজ স্যার নেই, আগামী রবিবার আসেন, সোমবার আসেন।’ বলে জানাতে থাকেন। এই জানানোর দায়িত্ব-মুক্তি এলো ক্যানসার রোগীর বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর পর। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই মর্মান্তিকতা অবগত হয়ে আবেদনপত্রটি স্বীয় নির্বাহী ক্ষমতা বলে তাঁর দরবারে আনয়ন করেন এবং যথারীতি দর্শনান্তে নয়ন-মনের সার্থকতা অর্জন করে বলেন, ‘উনার বিষয়ে অনেক লোক আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করেন। উনাকে সময়মতো অফিসে পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে উনার বিরুদ্ধে।’
এই ‘উনি’ তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা। এইটুকু জানার পর আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তর হতে আর কোনও বিশেষ মন্তব্য-পা-িত্য প্রকাশের কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমাদের জনগণ যদি এইরূপ কর্মকর্তার গাফিলতি সহ্য করতে পারেন, দিনের পর দিন এবং নিজের পকেট থেকে এমন কাজ না করনেওয়ালা কর্মকর্তাকে বেতন দিতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আর কার কী-ই বা করার আছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই না যে, এই প্রতিবাদবিমুখ বাঙালি একদা প্রতিবাদী হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে এবং প্রাণ দিয়েছিল ত্রিশ লাখ। এখন সময় পাল্টেছে। সেই ত্রিশ লাখ প্রাণ বিসর্জনের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। নির্বাহী কর্মকর্তা অপেক্ষায় থাকুন, আপনাকে কীছু করতে হবে না, যদিও আপনারই ‘কীছু’ করার কথা। তারপরও গাফিলতির কারণে একজনের মৃত্যু সংবাদ সম্পর্কে সদয় অবগতির পর সমাজসেবা কর্মকর্তার কর্তব্যকর্মে অবহেলা সম্পর্কে নির্বিকার স্বীকারোক্তির জন্য ধন্যবাদ। জানি, জবাবদিহিতার নিয়মটা একদিন বদলে যাবেই, আমলাতান্ত্রিক বিভাগীয় থাকবে না, জবাবদিহি করতে হবে রাষ্ট্রের খোদ মালিক জনগণের কাছে। এইটুকু সম্ভব না হলে তো উন্নতির গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে নেবে। বলি মানুষ আর কতো ঠকবে?