গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলÑ “রাজনীতিতে অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লোকে পূর্ণ”। সংবাদবিবরণীতে লেখা হয়েছেÑ “দেশের রাজনীতি অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লোকে পূর্ণ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।” তিনি মনে করেন, রাজনীতিতে এখন শিক্ষাগত যোগ্যতার কারচুপির ঢল নেমেছে এবং অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিতরা শিক্ষিতদের ওপর প্রভাব রাখছে। তাই গণতন্ত্র ও রাজনীতিক বিকাশের জন্য ডাকসুর নির্বাচন দেওয়া উচিত। ক্ষমতাধর নেতারা স্বকীয় নেতৃত্বের মহাত্ম্য ক্ষুণœ হবার ভয়ে সাধারণত এমন মন্তব্য করেন না। বুঝাই যাচ্ছে ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে ব্যতিক্রম, সত্যোচ্চারণের জন্য তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ।
গত শতকের পঁচাত্তরের রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশের রাজনীতিক কর্মকান্ড কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ভালো নেতৃত্বের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরকম একটি ধারণা প্রচলিত আছে অভিজ্ঞ মহলে। অতিসাম্প্রতিক শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উচ্চতাকে বাদ দিলে কথাটা একেবারে ফেলনা নয়। দেশজুড়ে বর্তমান সামাজিক-রাজনীতিক অস্থিরতা, অপসংস্কৃতচর্চার লাগামহীন প্রসার, ব্যাপক অর্থ-আত্মসাৎ ও পাচার, দুর্বৃত্তায়ন-দুর্নীতি, খুন-ধর্ষণ, গুপ্ত-অগুপ্ত হত্যা, জঙ্গিবাদের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি দেশে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবের প্রকট লক্ষণ। কেউ কেউ মনে করেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এখনও পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ব্যাপী এদেশে ও সমাজে শাসিত হয়ে এসেছে অশুভ শক্তির দ্বারা, কোনও ভালো নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বরং যোগ্য নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্মমভাবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ প্রায় সকল নেতৃত্বকেই এই উপমহাদেশে সহ্য করা হয়নি। তাই বলতে গেলে সবসময়ই যোগ্য নেতৃত্ব থেকে জাতি বঞ্চিত হয়েছে।
দেশের সাধারণ মানুষই নেতৃত্বের ¯্রষ্টা। তাই দেশের মানুষ যে মাপের, দেশের নেতাও সে মাপের। জনগণ যেমন নেতার যোগ্য হয় তারা তেমন নেতাই পায়। নেতা তৈরি হয় জনগণের ভোটে। সমর্থক ও অনুসারী ছাড়া নেতা হয় না। জনবিচ্ছিন্ন নেতা কোন নেতা নয়, সে অন্য কিছু। কিন্তু অতিসম্প্রতি সাধারণ মানুষের নেতা নির্বাচনের ক্ষমতাটুকুও হরণ করেছে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে মনোনয়নবাণিজ্যের ফাঁকতালে ফেলে। অর্থাৎ মুক্তবাজার অর্থনীতির কল্যাণে রাজনীতিও উৎকৃষ্ট পণ্য হয়ে গেছে।
আমরা আশা করি, নেতৃত্ব তৈরির বিদ্যমান সংকট অচিরেই দূরীভূত হবে। কিন্তু তার আগে চাই মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতিবন্ধকতাহীন রাজনীতিক পরিসর ও জনস্বাধীনতা। তারও আগে চাই নাগরিকের সুশিক্ষিত হয়ে ওঠার অবাধ সুযোগ। মনে রাখতে হবে শিক্ষাবঞ্চিত নাগরিক যোগ্য নেতা সৃষ্টিতে কোনওই ভূমিকা রাখতে পারে না। শিক্ষাবঞ্চিত মানুষের যোগ্যতা একটাই, অশুভ শক্তির ক্রীতদাস হয়ে ওঠা।