বুধবার সারাদেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মদিন পালিত হলো। সে উপলক্ষ্যে বিদগ্ধজনের অমৃতভাষণ শ্রবণ করে শ্রোতারা ঘরে ফিরে গেছেন, তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। আর বাংলাদেশে তখন চলছে একটি ভয়ঙ্কর আপতকাল। জীবনান্দীয় “অদ্ভুত আঁধার” কেবল ঘনিয়ে আসছে চারদিকে। ১৯১৮ সালে চীনের অধঃপতিত সমাজবাস্তবতার বর্ণনা করতে গিয়ে লু সুন যেমন বলে ছিলেন তেমনি করে কেউ যদি আজ বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতাকে বর্ণনা করতে বলেনÑ “দুনিয়াটা গোল্লায় গেছে! দিনে দিনে মানুষ আরও খারাপ হয়ে উঠছে! দেশটা আজ সর্বনাশের সম্মুখীন।” তা হলে তিনি তাঁর স্বদেশ সম্পর্কে একেবারে যাকে বলে নিখুঁত সত্যিটাকেই প্রকাশ করবেন।
দেশের অধঃপতনের আর কী বাকি আছে? এখানে কী না হচ্ছে? তনু নামের মেয়েটিকে তিনজনে মিলে গণধর্ষণ করে হত্যা করেছে, সবচেয়ে নিরাপদ এলাকায়, ক্যান্টনমেন্টে। হত্যার আলামত নষ্ট করেছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হচ্ছে, আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা। কোনও এক সাংসদ একটি ৮/৯ বছরের শিশুকে একাধিক বার গুলি করে আহত করেন, তাঁর এই কান্ড নিয়ে সংসদ সদস্যরা পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, যা কল্পনারও অতীত, এখানে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে দায়মুক্তির বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, সংসদীয় পদ্ধতিতে এবং যাঁরা এই কাজটি করেছিলেন তাঁরা নিজেদেরকে গণতন্ত্রের ধারক বলে জনতার কাছে প্রচার করেছিলেন। তারপর দেশ ক্রমে হয়ে উঠেছে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য।
মোদ্দাকথা এখানে শ্রেয়নীতির চর্চা নেই। ধর্মের অনৈতিক ব্যবহার, জঙ্গিবাদের অমানবিকতাসহ সামগ্রিক দুর্বৃত্তায়নের বিস্তৃতি সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে। এই অধঃপতন থেকে গণমানুষের মুক্তি চাই। সে জন্য জাতিকে যে সাংস্কৃতিক মান অর্জন করতে হবে, সেটা সম্ভব করতে হলে কাজী নজরুল ইসলামের চর্চা বাড়াতে হবে। তাঁর কাব্যবাণীর মর্ম জাতির মননে ধারণ করে বর্তমান আপতকালীন বিপদে উত্তরণের সাধনায় ব্রতী হতে হবে। মুক্তির মন্ত্রে মগ্ন হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত করে পরিশুদ্ধ করে তুলতে হবে জাতিকে। “কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান” নজরুলের এই বাণীর ব্রত পালনে বিশেষ করে তরুণসমাজকে হতে হবে বদ্ধপরিকর, নামতে হবে কঠোর সংগ্রামে।