পুরুষতান্ত্রিক বা পুরুষশাসিত এই সমাজে নারী সম্পর্কে প্রবাদতুল্য ধারণা প্রচলিত আছে। পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির আড়াল থেকে নারীর উপর সকল দোষ চাপানো হয়। নারীর সম্পর্কে পুরুষদের মধ্যে এইরূপ অযৌক্তিক মানসতা যতদিন বিদ্যমান থাকবে ততদিন নারীর উপর পুরুষ কর্তৃক ধর্ষণরূপ উৎপীড়ন কখনো বন্ধ হবে না। পত্রিকায় প্রতিদিন ধর্ষণ-গণধর্ষণের খবর বাধ্য হয়ে পড়তেই হবে।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল- “শহরে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষিত।” সংবাদটি সেই প্রবাদের সত্যকেই প্রতিপন্ন করে। এমন ধর্ষণের ঘটনা কেবল নয়, গণধর্ষণের ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে, দেশের যত্রতত্র। অবশ্যই এসব ঘটনা জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধ মাঝে মাঝেই বিশেষ প্রবল প্রতাপী মহলের আনুকূল্য পেয়ে যায়। এবং অবশিষ্ট নিরীহ সমাজ প্রতিবাদী হয়ে উঠতে সাহস পায় না। বরং নির্যাতিতার পরিবার প্রতিকার প্রত্যাশী হলে প্রবল চাপ কিংবা হুমকির মধ্যে পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে আইনি সহায়তা পেতেও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এমতাবস্থায় এ সমাজে নারীরা যে প্রতিকারহীন সামাজিক পীড়নের মধ্যে আছেন, সেটা কাউকে বিশেষভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। এ সমাজের সদস্য সকলেই এই ঘৃণ্য অপরাধটি সম্পর্কে কমবেশি অবগত আছেন। সমাজের সিংহভাগ মানুষ এই পৈশাচিক নির্যাতন নারীর উপর অব্যাহত থাকুক, সেটা অবশ্যই চান না। তাঁরা চান আবহমানকাল হতে চলে আসা এই সনাতনী নির্যাতনের অবসান ঘটুক চিরতরে। আর সেটা করতে হলে সর্বাগ্রে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ার কোনও বিকল্প নেই। সমাজ মানসতা থেকে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিকতার নির্মমতা প্রয়োগের সংস্কৃতিকে অর্থাৎ ধর্ষণকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। সেটা না পারলে কেবল আইন ও আইনের প্রয়োগ দিয়ে সমস্যার কোনও কার্যকর সমাধানে উপনীত হওয়া যাবে না। তদোপরি ‘যেমন কুকুর, তেমন মুগুর’ এই কথা স্মরণে রেখে প্রয়োজনে যথোপযুক্ত ও কালোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে।