স্টাফ রিপোর্টার ::
জামালগঞ্জে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করান না প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকরা। তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী পাঠদান করান। দিনের পর দিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ওয়ান থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী অ, আ ভালোভাবে পড়তে পারেনা বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা আরও জানান, ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্র নিজের নাম বানান করতে পারে না। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গণনা করতেও পারে না।
গত বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের এমন বেহালদশার কথা জানাযায়।
ওইদিন বেলা ১২টায় গিয়ে দেখা যায় ফেনারবাঁক ইউনিয়নের নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙিনায় সুনসান নীরবতা। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে ঝুলছে তালা। উত্তোলন করা হয়নি জাতীয় পতাকা।
স্কুলের নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম নামের অভিভাবক জানান, দিনের পর দিনে এভাবে বিদ্যালয়টিতে তালা ঝুলে থাকে। সপ্তাহ কিংবা পনেরো দিনেও একবারের জন্যও আসেন না কোন শিক্ষক। আরেক অভিভাবক শফিকুল ইসলাম জানান, বেলা ১২টা বাজে এখনো কোনো শিক্ষক আসেননি। এভাবে দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকে। হঠাৎ মাঝেমধ্যে তাদের ইচ্ছে হলে বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষকরা।
তফুরা বেগম নামে এক শিক্ষার্থীর মা ক্ষোভের সুরে জানান, ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্র নিজের নাম বানান করতে পারে না। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গণনা করতে পারে না। আমরা এই স্কুলের শিক্ষকদের পরিবর্তন চাই। প্রধান শিক্ষক শংকর স্যার মাঝেমধ্যে আসে। কিন্তু সহকারী শিক্ষক দোলন ম্যাডাম সারা বছরই অনুপস্থিত থাকেন।
অপরদিকে হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক কখন আসবেন সেটাও তারা জানেন না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন না ওই স্কুলের দপ্তরি জয়কুল ইসলাম। স্কুলের তালা কে খুলে দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা জানান, হটামারা গ্রামের মিজান নামে একটি ১০ বছর বয়সি ছেলে প্রতিদিন তালা খুলে দেন। পরে আবার দুপুরে এসে ছুটি দিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যান।
ওই গ্রামেরই যুবক সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্র আনিসুর রহমান জানান, নামেমাত্র স্কুল চলছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নাই। মাসের পর মাস চলে যায়, কোনো শিক্ষক স্কুলে আসেনা। একজন প্রধান শিক্ষক ও তোফায়েল নামে একজন সহকারী শিক্ষকসহ একজন দপ্তরি আছে। ৩ জনই অনিয়মিত স্কুলে আসেন। তাদের অনিয়মিত স্কুলের আসার কারণেই ওয়ান থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী অ, আ ভালোভাবে পড়তে পারেনা।
পুরো স্কুলে তালা ঝুলছে কেন এ বিষয়ে নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর পুরকায়স্থকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি ছুটি নিয়েছি। তাই স্কুলে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে আমি নিয়মিত স্কুলে যাই।
হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জু পুরকায়স্থ জানান, আমি স্কুলে নিয়মিত যাই। তবে ওইদিন মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে যেতে পারিনি।
জামালগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রাব্বি জাহান বলেন, নাজিমনগর ও হটামারা স্কুল আজ বন্ধ ছিলো আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। কেউ কোনো ছুটি নেয়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, সরকারের নির্দেশিত ছুটির বাইরে কোন ছুটি বিদ্যালয় দিতে পারে না। অবশ্যই ছুটির আগে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানাতে হয়। তবে যেহেতু জানতে পারলাম জামালগঞ্জের দুইটি বিদ্যালয় এভাবে বন্ধ রেখে শিক্ষকরা চলে যান, তাই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।