স্টাফ রিপোর্টার ::
খাতা-কলমে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে তা শেষ হবে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮৪ শতাংশ কাজ স¤পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও সাত দিন সময় লাগবে। তবে কৃষকেরা শঙ্কা করছেন, এর মধ্যে বৃষ্টি হলে বাঁধের মাটি ধসে পড়বে। আবার তা সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় ফসল তলিয়ে যাবে।
এদিকে মার্চের শুরুর দিকে বৃষ্টির আভাসও রয়েছে। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। কিছু স্থানে বৃষ্টি হয়েছেও। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ৩ মার্চ দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অসময়ের বৃষ্টিকে দায়ি করছে পাউবো। তবে তাদের এমন অজুহাতকে গা বাঁচানোর চেষ্টা বলছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
পাউবো’র দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলার হাওরে এবার পাউবো ও প্রশাসন ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের কাজ করছে। এ জন্য ৭৩৫টি প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের সদর, শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলার হাওর এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢিলেঢালাভাবে করা হচ্ছে হাওরের বাঁধের কাজ। অনেক বাঁধে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ বাঁধে লাগানো হয়নি দুর্বা ঘাস।
জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষক কৃপা দাস বলেন, এবারের বাঁধের কাজ অন্যবারের তুলনায় খুব বাজেভাবে করা হচ্ছে। এ রকম যদি কাজ করা হয় তবে এক দিনের বৃষ্টিতেই বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাবে তাঁদের।
দেখার হাওরের কৃষক সোবহান মিয়া বলেন, ছাইয়া কিত্তা ক্লোজারের মাটি ধসে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগে এই বাঁধের কাজ শেষ না করা গেলে এই হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমি অরক্ষিত থাকবে। দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।
বাঁধের কাজকে কৃষকের সঙ্গে মশকরা আখ্যায়িত করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক বিজন সেন রায় বলেন, পাউবো কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে, তারা সময় বাড়াতে চাইছে বাড়াক; তবু যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে পারিনি। আর সাত দিন সময় বাড়ালে শেষ করে ফেলতে পারব। এ জন্য আমরা আবেদন করব।
জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন বাঁধের কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। সে জন্য সময়মতো শেষ হয়নি। তবে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলব। অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।