স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে নিয়োজিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজনের দেখা নেই। দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ সারছেন এস্কেভেটর মেশিনের চালকরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রকল্প চুক্তিতে বিক্রি করে দেয়া হয় এস্কেভেটর মেশিনের মালিকের কাছে। আর তারাই মেশিন দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে মাটি কেটে যততত্রভাবে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণ করছে।
এদিকে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত পিআইসি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারে নি। এছাড়াও কোনো বাঁধেই দায়িত্বপ্রাপ্ত পিআইসিগণ নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করছে না।
সরেজমিনে তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ এলাকায় গিয়ে কোন পিআইসিকেই বাঁধে তো দূরের কথা এর আশপাশের এলাকায় দেখা যায়নি। তারা নিজ নিজ বাড়িতে, কেউবা উপজেলা সদরে, অথবা জেলায় অবস্থান করছেন বলে জানাযায়। আর বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে এস্কেভেটর মেশিনের চালকগণ।
শনির হাওরপাড়ের কৃষক জহুর আলী, মাফিক নুর, হযরত আলী, খোরশিদ আলীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পিআইসি নেয়া লোকজনকে বাঁধে পাই না। যার ফলে আমরা কিছুই বলতেও পারি না। যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার অর্ধেক টাকায় ভেকু মেশিনের (এস্কেভেটর) মালিকের কাছে বিক্রি করে প্রতিটি পিআইসি।
তারা আরও জানায়, ভেকুর মালিকগণ তাদের নিয়োজিত লোক দিয়ে তাদের লাভ রেখে বাঁধে মাটি ফেলছে। এর ফলে বাঁধ নির্মাণে যে সকল নিদের্শনা রয়েছে তার সঠিকভাবে একটিও বাস্তবায়ন না হলেও বরাদ্দের পুরো টাকাই উত্তোলন করছে। অন্যদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। বাঁধও দুর্বল হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন, তাহিরপুর উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তুজাম্মিল হক নাসরুম বলেন, সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় বাঁধ দুর্বল হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের চাপে এসব বাঁধ টিকবে না। আমাদের এক ফসলী বোরো ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাবে এবারও।
শনি হাওরে ভেকু মেশিনে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করছেন শাকিল মিয়া। তিনি জানান, ভেকু মালিক চুক্তিতে বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি মালিকের নিদের্শনা মতো কাজ করছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে যে নীতিমালা রয়েছে সে নীতিমালা বাস্তবায়ন না করায় দুর্বল বাঁধ ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরাঞ্চলের কৃষকগণ। আর বাঁধে কোনো পিআইসিকেই পাওয়া যায় না। তারা মাটি কাটার একটি গ্রুপের কাছে চুক্তিতে বিক্রি দেয় প্রকল্প। আর তারাই মেশিন এনে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছে। তাহলে পিআইসির কি দরকার। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে নজরদারি করলে বাঁধ আরও ভাল হবে।
তাহিরপুর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা এসও মনির হোসেন জানান, পিআইসি যারা নিয়েয়ে তাদের মাটি কাটার মেশিন নেই। তাই তারা মাটি কাটার মেশিন মালিকের সাথে চুক্তিভিত্তিক বাঁধ নির্মাণ করার জন্য বাঁধের দায়িত্ব দেয়। তবে সারাদিন মাটি কেটে বাঁধ দেয়ার পর রাতে এই মাটি কাটার মেশিন দিয়েই বাঁধের উপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এতে বাঁধে দুরমুজের প্রয়োজন পড়ে না।