শহীদনূর আহমেদ ::
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের শেষ দিন। প্রতিবারের মতো এবারও নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০ শতাংশের উপরে বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানালেও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দাবি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
অপরদিকে, বাঁঁধের কাজ সম্পন্ন করতে আরও সপ্তাহ সময় বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সময় বর্ধিত হলে মার্চের ১ম সপ্তাহে শতভাগ কাজ শেষের প্রস্তুতি পাউবো’র।
অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি সহযোগিতায় চলছে বাঁধের কাজ। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বাঁধ নির্মাণ, পুনঃর্নিমাণ ও হাওরে ক্লোজার নির্মাণ। প্রতি বছরের মতো এবারও কাবিটা নীতিমালার আওতায় জেলায় ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকার বিশাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জেলায় প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর বোরো ফসল আগাম বন্য ও পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষার জন্য এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং নির্ধারিত সময়েও কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় হাওরজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মার্চ মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের শঙ্কা থাকায় উজানের ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট হাওরের কৃষকরা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে সুনামগঞ্জ সিলেট অঞ্চলসহ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কেমন হবে তা দুয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে। বৃষ্টিপাত যদি অতিমাত্রায় হয় সেক্ষেত্রে নদীতে ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দিবে কিনা এটি বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলতে পারবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন।
হাওরপাড়ের কৃষকরা জানান, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট অকাল বন্যা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো অনেক উপজেলায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি অনুকূলে না থাকলে কৃষকেরা এবারও তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আছেন শঙ্কায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা। জেলার ১৫৯টি ক্লোজারে শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষক কৃপা দাস বলেন, এবারের বাঁধ কাজ বিগত সময়ের তুলনায় খুব বাজে করা হচ্ছে। এরকম যদি কাজ করা হয় তাহলে একদিনের ঢলে বাঁধ ভেঙে আমাদের সব ফসল তলিয়ে যাবে। জামালগঞ্জে কোথাও নিয়ম মেনে কাজ করা হচ্ছে না। এটির জন্য দায়ি পাউবোর কর্তারা। তারা নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। সেজন্য তারা অপ্রয়োজনীয় বাঁধে বেশি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এবং যে বাঁধ ও ক্লোজার খুব প্রয়োজন সেটিতে কাজই শুরু হয়নি।
দেখার হাওরের কৃষক সোবহান মিয়া বলেন, ছাইয়া কিত্তা ক্লোজারের মাটি ধসে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগে এই বাঁধের কাজ শেষ না করা গেলে দেখার হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমি অরক্ষিত থাকবে। দ্রুত বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ইতোমধ্যে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় গড়ে মোট ৮৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আরও সপ্তাহ সময় বাড়তে পারে। এই সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে।
তবে পাউবো’র এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, পাউবো মিথ্যাচার করছে। তারা হাওরের মাটি কলমে কাটা হচ্ছে। গোটা সুনামগঞ্জ মিলে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র। এখনো অনেক হাওর অরক্ষিত। উজানে বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাবে। নদীতে পানি আসলে অসমাপ্ত বাঁধ দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করবে। তখন হাওরডুবি হলেও এর দায় কে নিবে? বাঁধ নির্মাণে গড়িমসি করছে পাউবো। তারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের সাথে নিয়ে দ্রুতই আন্দোলনের ডাক দিবো।
বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, গেল সপ্তাহে কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে বাঁধের কাজ বন্ধ ছিল। তাই সময় মতো কাজ শেষ হয়নি। সময় বাড়ানোর ব্যাপারে মিটিংয়ে আলোচনা হবে। দ্রুতই বাঁধের কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দেয়া হবে।