স্টাফ রিপোর্টার ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন থেকে কাটাখালি বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। সড়কে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আগে এই সড়কের কাজ হয়েছিল। সড়ক ভেঙে যাওয়ার পর কেউ সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এতে বিভিন্ন স্থানে সড়কের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে বালু-পাথর বেরিয়ে পড়েছে। ভাঙা সড়কে গাড়ি চলাচলে ধুলিকণা উড়ে সড়কের পাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। বৃদ্ধ, শিশু, মহিলা যাত্রী এবং রোগী নিয়ে আসা-যাওয়ায় মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে এই সড়কে। ভাঙা সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে ভাড়া দিতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিয়ানীবাজার, শ্যামলবাজার, মুজুরীবাজার, মঙ্গলপুর বাজার, শ্রীপুর বাজারসহ প্রভৃতি এলাকার হাটবাজারে ও পয়েন্টের দোকানে অতিরিক্ত দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পথচারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, এই সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। যানবাহন চলে কয়েক শত। কিন্তু সড়ক ভাঙা থাকায় ভাড়া বেশি দিতে হয়। ঝাঁকুনিতে নিজের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই সড়কের দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।
মঙ্গলপুর বাজারের বাসিন্দা অ্যাড. সালেহ আহমদ বলেন, এই উপজেলার কোনো সড়ক এমন অবহেলিত নয়। প্রায় দশ বছর আগে সড়কের কাজ হয়েছে, তাও নি¤œমানের। এই জন্য দ্রুত সড়কটি ভেঙে যায়। কেউ সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। আমরা সড়কের টেকসই উন্নয়ন চাই।
সিনিয়র শিক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, এই সড়ক দিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী আসা যাওয়া করে। নারী, শিশু, রোগী সবাই মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হন। সড়কের উন্নয়ন জরুরি প্রয়োজন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. রেনু মিয়া বলেন, সড়কের দ্রুত উন্নয়ন না হওয়ায় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানাই।
গাড়ি চালক আবুল বাশার বলেন, ভাঙা সড়কে গাড়ি চালালে গাড়ির নানা ক্ষতি হয়। তেলও লাগে বেশি। এই জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি আদায় করতে। ভাঙা সড়কে চলাচলে ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের গালিও শুনতে হয়।
মঙ্গলপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলী আহমদ, মজুর বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন এবং শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী আহমদ আলী বলেন, ভাঙা সড়কে যানবাহন দিয়ে মালামাল আনয়ন করলে বেশি ভাড়া লাগে। এই জন্য আমরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করি।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, এই সড়কের কাজ হয়েছে সর্বশেষ অন্তত ১০ বছর আগে। সংস্কারের কয়েক দিন পর থেকে ভাঙন শুরু হয়। এরপর আর কাজ হয়নি। এবার সংসদ নির্বাচনের আগে টেন্ডার হয়েছে সড়ক সংস্কারের। কিন্তু এখন পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ ধরা হয়নি। কিছুদিন পর শুরু হবে বৃষ্টি বাদল। তখন আর কাজ আর হবে না। এই সড়কের দ্রুত কাজ করা দরকার।
দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের সড়ক মেরামতের জন্য ১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রাস্তার পাশে প্রটেকশন দেওয়াল, ড্রেন নির্মাণ, কার্পেটিং করা হবে। সড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করা হবে। ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের ভাঙা সড়ক মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হলে এই মওসুমে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃষ্টি-বাদল শুরুর আগে সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে।