1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

লন্ডনে অর্ধেক মজুরিতেও কাজ পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

 

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
‘স্বপ্নের লন্ডনে স্বপ্নভঙ্গের দহন’ নিয়ে দিন কাটছে সদ্য যুক্তরাজ্যে আসা বাংলাদেশিদের। ব্রিটেনে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ১১ পাউন্ড ৪৪ পয়সা। সেখানে অর্ধেকেরও কম প্রতি ঘণ্টায় ৫ পাউন্ডেও কাজ পাচ্ছেন না হাজারো বাংলাদেশি।
গত তিন বছরে ছাত্র ও কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। এদের বড় অংশই বসবাস করেন লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানী লন্ডনেই দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ থাকলেও এ শহরে মাসের পর মাস কাজ না পেয়ে বেকার হাজারো বাংলাদেশি।
ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাজের জন্য হাহাকার। চেনা-পরিচিত পর্যায়ে যোগাযোগ করেও মিলছে না কাজ। হাজারো বাংলাদেশি দেশ থেকে আসার পরও মাসের পর মাস বেকার। বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি কমিউনিটিতে অবস্থা প্রায় একই।
ফেসবুকে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি গ্রুপে নাম প্রকাশ না করে, সহযোগিতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন লন্ডনে আসা এক বাংলাদেশি। তিনি লিখেছেন, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছিলাম কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায়। এখন দু’বেলা খাওয়া আর একটা ছাদের নিচে থাকাটাই বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ মাস ধরে আমি মেইন অ্যাপ্লিকেন্ট, কিন্তু আমার কোনও কাজ নেই। হন্যে হয়ে রেস্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন, অ্যাগ্রিকালচার সাইটে কাজ খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। আমার স্ত্রী ডিপেনডেন্ট হিসেবে আসার পর শুধু এক মাস হাউজকিপিংয়ের জব করেছিলেন, এখন বেকার।
আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, হাত প্রায় খালি। তাই গত মাস থেকে লন্ডনে এক আত্মীয়ের বাসায় আছি। এখন তারা এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে- অন্য জায়গায় রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য। এখন কোথায় যাবো, কী করবো, কিছুই আর মাথায় আসছে না। এক সপ্তাহ পর রাস্তায় থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।
আকুতি জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, যদি কোনও দয়ালু ভাই-বোন আমাদের কাউকে যেকোনও শহরে একটা কাজ দিয়ে হেল্প করতেন, সারা জীবন এই উপকারের কথা ভুলতাম না।
আর এ সুযোগকে পুঁজি করে বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ পেলেও ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ডও মজুরি দিচ্ছেন না মালিকরা। রেস্টুরেন্টগুলোতে দিনে আট ঘণ্টার বেশি, সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১২০ পাউন্ড। এমন অন্তত দুটি ঘটনার কথা গণমাধ্যমকে জানান, বার্মিংহামে বসবাসরত সাংবাদিক আশফাক জুনেদ। তিন এ প্রতিবেদককে বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ড বেতনেও মিলছে না কাজ। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে কাজের জন্য হাহাকার। অনেকে যুক্তরাজ্যে আসার পর ছয় মাস কেটে গেলেও কাজ জোটাতে পারছেন না।
লুটনে বসবাসরত লিবডেম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে স¤পৃক্ত মাহবুবুল করীম সুয়েদ বলেন, দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যবসাগুলোর অবস্থা খারাপ। বাংলাদেশিসহ বিশেষত দক্ষিণ এশীয় ব্যবসায়ীরা কর্মীকে ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ড করে ১২ ঘণ্টার মজুরি ৬০ পাউন্ড দিচ্ছেন। অর্ধেকের চেয়ে কম মজুরি পেলেও লন্ডনে একজনের জন্য ছোট একটা রুমের ভাড়া সর্বনি¤œ ৬০০ পাউন্ড। নতুন আসা বাংলাদেশিরা বেতন ও ঘর ভাড়ার ক্ষেত্রে জুলুমের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশের কয়েকটি শীর্ষ গণমাধ্যমে কাজ করে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে এসেছেন রুম্পা রায়। তিনি বলেন, নতুন যারা আসছেন, তাদের থাকার জায়গা ও কাজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য করছেন আমাদের একশ্রেণির মানুষ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে ভাড়া নিতে হয়, নতুন আসা বাংলাদেশিদের। একটি রুমে পার্টিশন দিয়ে, গার্ডেনে রুম তুলে ভাড়া দিচ্ছেন তারা নতুনদের কাছে। দেশ থেকে যারা বিভিন্ন ভিসায় এসেছেন – তারা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির অর্ধেক ঘণ্টায় পাঁচ পাউন্ডও বেতন দিচ্ছেন না দেশি নিয়োগদাতারা।
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন শিক্ষাবিদ ড. রেণু লুৎফা। তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যখন এ দেশে বসতি গড়েন, তখন তাদের কাছে কিছুই ছিল না। তারা ভাষা জানতেন না, গরমের কাপড় ছিল না, খাবার ছিল না, থাকার জায়গা ছিল না। তদুপরি তারা নিজেদের বসতি স্থাপন করেছেন। টিকে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তা-ই করেছেন। অভিযোগ করার কোনও মাধ্যম ছিল না। নিজেরাই যখন যা পেয়েছেন তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। নিজেদের লড়াই নিজে করতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন দেখি এরা শুধু কাজ নেই বলে হাত পাতে! পাশে অন্য দেশের নাগরিকদের দেখি বাগান পরিষ্কার করছে, কার্পেন্টারের কাজ করছেন, মিস্ত্রির কাজ করছেন – এক কথায় এমন কোনও কাজ নেই যে তারা করছেন না। সকালে এক কাজ তো রাতে আরেক কাজ। আমাদের শুধু অভিযোগ। রেস্টুরেন্টের কাজ, খাবার ফ্রি… তারপরও অভিযোগ বেতন বেশি না!

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com