1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৯:০৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দেখার কেউ নেই : সরকারি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে ঠিকাদাররা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সরকারি পতিতভূমি থেকে মাটি নিয়ে সড়ক, সড়কের স্লোভ, সেতুর এপ্রোচসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করছে ঠিকাদারের লোকজন। এতে পতিতভূমি সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মাটির পুরো টাকাই পকেটে ঢুকছে তাদের। এতে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার ও তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজন। সড়কে ব্যবহারের সঙ্গে ওই চক্র এসব মাটি ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রিও করে দিচ্ছে। যার ফলে গবাদিপশুর গোচারণ ভূমি, ঘাসের স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক সংস্কার ও পুননির্মাণের কাজ চলছে। সংস্কারকাজে সড়কের স্লোভ ও সেতুর এপ্রোচের জন্য দরপত্রে মাটির মূল্য ধরে ঠিকাদারদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা মাটি কিনে বিভিন্ন স্থান থেকে এনে দেওয়ার কথা থাকলেও সংস্কারাধীন সড়কের পাশের সরকারি পতিত জমি, হাওরের কান্দা-জাঙ্গাল, চরপড়া নদীর তীর, গোচারণভূমিসহ সরকারি মালিকানাধীন জায়গা থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে কাজ সারছে। গত নভেম্বর মাস থেকে এসব স্থান থেকে এস্কেভেটর মেশিনে মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে সড়কের স্লোভে প্রকাশ্যে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে সরকারি মাটি দিয়ে কৌশলে কাজ বাস্তবায়ন করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
সরেজমিনে সম্প্রতি দেখা গেছে শাল্লা-আজমিরিগঞ্জ সড়কে কুশিয়ারা সেতু থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলেও সড়কে ফেলা হচ্ছে। শাল্লা-আজমিরিগঞ্জ ১৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে। এই সড়কের মাটি কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে কিশোরগঞ্জের হাবিব নামের এক যুবক।
দিরাই-মদনপুরের ২৬ কি. মি. জায়গা ঘুরে দেখা গেছে এখানে কাজ বাস্তবায়ন করছে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২৬ কিলোমিটার সড়কের এই সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে ৩০ কোটি টাকায়। সড়কটির দুই পাশের স্লোভ ও প্রস্থ বাড়ানো হচ্ছে নতুন করে। এতে নতুন মাটি লাগছে। আর এই মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে কালনী নদীর তীর কেটে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালি বাজারের পশ্চিমে নদীর তীর কেটে এস্কেভেটরে মাটি উত্তোলন করে সড়কে ফেলতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের দুই পাশে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন থেকে তিনটি প্যাকেজ ৮২ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে দুই পাশের স্লোভ প্রটেকশনে যে মাটি ফেলা হচ্ছে তা দেখার হাওরের কান্দা থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।
নিয়ামতপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের ৯ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কার ও মেরামত কাজ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় চলছে। এই সড়কে, স্লোভে সেতুর এপ্রোচে মাটি ফেলা হচ্ছে হাওরের জাঙ্গাল-কান্দা কেটে। এতে গোচারণ ভূমি কমছে। সংকটে পড়েছে গবাদিপশুর খাদ্য ব্যবস্থা। এভাবে ঠিকাদার ও তাদের লোকজন মাটি না কিনে সরকারি জমি থেকে মাটি নিয়ে সংস্কার ও নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। ঠিকাদার শ্রেণির সঙ্গে আতাত একটি এলাকার প্রভাবশালী মহল এই কাজে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের টিটু দাস বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জনদাবির প্রেক্ষিতে আমাদের নিয়ামতপুর-আনোয়ারপুর সড়কে কাজ শুরু হয়েছে। এতে স্লোভ ও সেতুর এপ্রোচের যে মাটি লাগছে তা অবৈধভাবে নদী থেকে ড্রেজিং করে এবং হাওরের কান্দা কেটে দেওয়া হচ্ছে। এতে ঠিকাদার ফাউ হিসেবে মাটি পেয়ে মাটির বরাদ্দ পুরোটাই বাঁচিয়ে দিচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি তোলার কারণে নদী পড়েছে হুমকিতে এবং হাওরের গোচারণ ভূমি কমছে।
শাল্লা উপজেলার নিজশাল্লা গ্রামের কৃষক জামান মিয়া বলেন, আমাদের শাল্লা-আজমিরিগঞ্জ সড়কের কাজ চলছে। সড়কে মাটি দেওয়া হচ্ছে কুশিয়ারা নদী ড্রেজিং করে। খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি অবৈধভাবে মাটি তুলে তারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
কুশিয়ারা নদী অবৈধভাবে ড্রেজিং করে সড়কে মাটি সরবরাহকারী হাবিব মিয়া বলেন, ঠিকাদার আমাকে মাটির কাজের অনুমতি দিয়েছেন। আমি সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মাটি সরবরাহ করছি।
নিয়ামতপুর-আনোয়ারপুর সড়কের সাব ঠিকাদার আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে মাটি কিনে সড়কে ব্যবহার করছি। তারা তাদের নিজ জায়গা থেকে মাটি তুলে সরবরাহ করছেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা যথাসময়ে ও যথাযথভাবে কিভাবে কাজ করবে এটা তাদের বিষয়। আমরা নিয়মমাফিক কাজ চাই। তবে কয়েকটি জায়গায় সড়কের কাছাকাছি সরকারি জমি থেকে মাটি তুলে সড়কে দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে আমরা ঠিকাদারদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com