1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভণ্ডামি’

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বিশেষ প্রতিবেদক ::
বাংলাদেশের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘মানদণ্ড’ অনুসরণ, ‘সুষ্ঠু’ এবং ‘নিরপেক্ষ’ করার জন্য একের পর এক হস্তক্ষেপ করেছে। এমনকি নতুন ভিসা নীতি প্রয়োগ করা শুরু করে মার্কিন প্রশাসন। নির্বাচনে সব দলের অংশগহণ নিয়ে মার্কিন ‘উদ্বেগ’ দেখা গেলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দলের রাজনৈতিক নেতা জেলে থাকলেও সেদেশের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন তোলেনি যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা একে মার্কিন ‘ভ-ামি’ বলে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তেমন কোন সহিংসতা হয়নি। দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা একে অবাধ, সুষ্ঠু বললেও ভিন্ন পথে হেঁটেছে মার্কিন সরকার। তবে সবকিছু উপেক্ষা করেই নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ঘিরে সারা দেশে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখায় বিতর্কিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ছাড়া এ নির্বাচন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে। তাঁর দলের নেতা-কর্মীরাও দমন-পীড়ন ও মামলায়-হামলায় বিপর্যস্ত।
নিজেদের দলীয় প্রতীক না পেয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলেন। ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে এমন আশংকায় সেদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে রাখা হয়। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের মাধ্যমে ভোটের দিনের কারচুপি শুরু হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন পিপিপি সাবেক সিনেটর মুস্তফা খোখার। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। পাকিস্তানের মতো এমন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটলেও এক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি অবলম্বন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অপসারণে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ভূমিকা, দুর্নীতি ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন মামলায় ১০ বছর, ১৫ বছর এবং সাত বছরের কারাদ- হয়েছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিষয়ে উদ্বেগ জাগিয়ে তুলেছে বিদেশি হস্তক্ষেপ।
এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এর অনেক কিছুই সম্ভব হতো না। কাতারভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমনা খান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে উৎখাতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা বেশ স্পষ্ট। তবে, গোপন অভিযানের সাফল্য তাদের গোপনীয়তার মধ্যে রয়েছে, যা মার্কিন সরকারকে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করার অনুমতি দেয়।
পাকিস্তানের গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফারুক চুঘতাই বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, অথচ দুর্নীতিগ্রস্ত দলগুলো এই চক্রে একে অপরের সেবা করছে। এটা সত্য যে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের পাকিস্তানের মতো দেশে সরকার পরিবর্তন অপরিচিত নয়। বিশ্বব্যাপী নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পাকিস্তানের ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে কারসাজি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমনা খান বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তান অনেক বহিরাগত মোড়লদের জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে রয়ে গেছে, যা তার গণতন্ত্রের দুর্বলতায় অবদান রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বিষয়গুলোতে মাথা না ঘামিয়ে অন্য দেশের নির্বাচন বা সরকার নিয়ে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাকে ‘ভ-ামি’ হিসেবে দেখছেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য লোইস ফ্র্যাঙ্কেল।
ফ্লোরিডার পাম বিচে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের এক সভায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা, এমনকি এই ফ্লোরিডার রাজনীতি, প্রশাসন, মানবাধিকার নিয়ে যে অস্থির অবস্থা চলছে, সেখানে যদি আমরা বাংলাদেশের সরকার কিংবা নির্বাচনী ব্যবস্থার সমালোচনা করি, সেটা কি ভ-ামি নয়?
ডেমোক্রেটিক পার্টির এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমরা যারা ডেমক্র্যাট, তারা আমেরিকান মূল্যবোধে বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই সবকিছু করার চেষ্টায় থাকি। কিন্তু অন্যরা গত নির্বাচনে (যুক্তরাষ্ট্রের) কী করেছে? ব্যালট ব্যবস্থাকে মুছে ফেলতে কী ধরনের জঘন্য ষড়যন্ত্র চালিয়েছে, সেটি কী ভুলে গেলে চলবে?
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের আরেক উদাহরণ তৈরি করেছেন আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। পিটার হাস যখন প্রভাব খাটিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিলেন সরকারকে চাপে ফেলতে, তখন তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে ভিসা নীতির হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহবান জানান। যদিও তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে সংলাপের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল- আওয়ামী লীগ।
নিঃশর্ত এই সংলাপের প্রস্তাব এসেছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। যদিও সেখানে সাড়া না দিয়ে শর্ত জুড়ে দেয় বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ বিফলে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ‘প্রেসক্রিপশন’ আসে নিঃশর্ত সংলাপের। আর তাতে তখন সংলাপে বসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিএনপি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ নতুন নয়, তবে একেক দেশে একেক নীতি অবলম্বন করে। যুক্তরাষ্ট্র নিজে হস্তক্ষেপ করলেও অন্যকে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানায়। এমন উদাহরণ দেখা গেছে সর্বশেষ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের পর। জো বাইডেন চীনকে তাইওয়ানের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে তখন সতর্ক করে। সেই বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি তাকে স্পষ্টভাবে বলেছি যে (তাইওয়ানের) নির্বাচনে আমি কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ চাই না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com