শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জের বোরো ফসল ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার ‘দেখার হাওরে’ মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য চলছে। হাওরের খাস খতিয়ানভুক্ত কান্দা ও অনাবাদি জমি কেটে তা দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। এই ‘মাটিবাণিজ্যে’ গড়ে ওঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানাগেছে, হাওরের এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে সুনামগঞ্জ শহর এবং আশপাশের এলাকায়। দেখার হাওরের মাটি শহরে এনে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর, জলাশয়, খালসহ নিচু জমি। গ্রাম থেকে শহর পর্যায়ে রয়েছে মাটি বিক্রির এজেন্ট এবং সিন্ডিকেট। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একাধিক প্রভাবশালী।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সুনামগঞ্জ শহরের অদূরে দেখার হাওরের একাধিক স্পট থেকে মাটি পরিবহন করে শহরে নিয়ে আসছে অসংখ্য ট্রাক। শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লার মালিকানাধীন নিচু জমি ভরাটে কাজে লাগানো হচ্ছে এসব মাটি। মাটিবোঝাই এসব ট্রাক অবাধে চলাচল করায় শহরে তৈরি হচ্ছে যানজট। মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচলের সময় মাটি পড়ে সড়কের সৌন্দর্য্য নষ্ট করছে। সড়কের উপরে মাটির প্রলেপ সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টিবাদলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
অপরদিকে মাটি কাটার নামে অবাধে হাওরে কান্দা ও উঁচু স্থান কাটা হচ্ছে। তাছাড়া হাওরে গর্ত করে মাটি উত্তোলন করায় হাওর তার নিজস্ব ভূমিচিত্র হারাচ্ছে। ফসলি জমির ধানের মাড়াই, শুকানোসহ প্রক্রিয়াকরণ কাজে যে কান্দা ব্যবহার হয়ে আসছিল তা কেটে ফেলায় সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা। আপদকালীন সময়ে যেসব উঁচু জমি কৃষকরা ব্যবহার করতেন তা কেটে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর, বাহাদুরপুরসহ দেখার হাওর সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এসব মাটি শহরে নিয়ে বিক্রি করছে তারা। মাটিবাণিজ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী। যাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেন না কেউই। মাটির ব্যবসা করে রাতারাতি তারা মোটা অঙ্কের টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রতি ট্রাক মাটি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সারা হাওরের উঁচু জায়গা শেষ করি দিলার। মেশিন দিয়ে মাটি কাইট্টা এই মাটি শহরে বিক্রি করা হইতেছে। মহিনুর মেম্বার, কালা সুহেলসহ শহরের একাধিক মানুষ এই মাটির ব্যবসার নেতৃত্ব দের। কেউ কিচ্ছু কয় না।
গোবিন্দপুর গ্রামের মহিম তালুকদার বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক দিয়ে মাটি শহরে প্রবেশ করছে। কেউ কথা বলছে না। এসব মাটি কই যাচ্ছে এমন প্রশ্নও করছে না। মাটি পড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটির আলাদা স্তর তৈরি হয়েছে। একটি বৃষ্টি হলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটবে। এর দায় তখন কে নিবে।
হাওরের মাটি শহরে বিক্রি বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে মাটি কাটার বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. এমদাদুল হক শরীফ।