1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগে আইন সবার জন্যই সমান : ড. মো. সাইদুজ্জামান রনি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ী এবং ১১৭ জন ব্যবসায়ী ও সুশীল নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন এবং এই খোলা চিঠি গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এ বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
এখন কথা হল আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা কি সবার জন্য একই নিয়মে চলবে নাকি কোনো বিশেষ ব্যক্তির জন্য আলাদা/ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা থাকবে? যদি বিচার ব্যবস্থা সবার জন্যই সমান পথে চলে, বিদেশী ব্যক্তি যারা বিচারের বিরুদ্ধে লিখছে তাদের অবস্থান আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এবং মামলা এবং এর রায় এসেছে তার সবগুলোর শ্রম আইন লঙ্ঘন, আর্থিক দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকির মামলা। বেশিরভাগ মামলাই ঐ প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীরা করেছেন, যার মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন শ্রমিক মামলা করেন শ্রম আইনে। এর মাঝে অন্যতম হল শ্রমিক ও কর্মচারীর লভ্যাংশ না দেওয়া, গণ ছুটি না দেওয়া এবং চাকুরী স্থায়ীকরণ না করা।
২০১৭ সালে ঐ প্রতিষ্ঠানের ১১৫ জন কর্মচারী ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালত এবং হাই কোর্টে মামলা করেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাকা দেওয়ার নামে মানি লন্ডারিং এর মামলায় অভিযুক্ত।
আমাদের জানতে ইচ্ছে করে, ওয়াশিংটন পোস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা এবং এতে সাদাকালো পাতায় প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের জন্য ৮০৭ ডলার খরচ হয়। ড. ইউনুসের প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি ৫ কলাম ১৯ ইঞ্চি যার পিছনে খরচ হয়েছে কম পক্ষে ৭৬ হাজার ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
এছাড়াও নির্দিষ্ট স্থানে বিজ্ঞাপন প্রকাশ, বিজ্ঞাপন বানানো এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে আলাদা টাকার প্রয়োজন হয়েছে। শুধু এটি ই নয়, এর আগেও ড. ইউনুস ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে গত ৭ মার্চ। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ ১৮ ইঞ্চি ৫ কলামে এবং তখনও ৭৮ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপনের চার্জ হিসাবে।
এখন কথা হল, এত টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন কেন? সাধারণত যার জন্য চিঠি লেখা হয় তাকেই সেটি পাঠানো হয় অথচ ড. ইউনুসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি ছাপানো হয়েছে। বাংলাদেশের পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি ছাপানো হলে সেটি প্রধানমন্ত্রী সহ সারা দেশের মানুষ জানত। কিন্তু তা না করে এটি ছাপানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায় যা ছাপাতে অনেক খরচ হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে এটা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। কোন একটি বিবৃতি যদি কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে লিখা হয় তাহলে সবার সম্মতি নিয়ে লেখার কথা এবং সম্মতি নিয়েও মতভেদ রয়েছে।
নোবেল লরিয়েট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মামলা হয়েছিল যে, তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করেছেন এবং অমর্ত্য সে নকে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণাদি সহ আইনিভাবে সে মামলার লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যদি ভুলে জমি দখল হয়ে থাকে তাহলে তিনি জমি ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। তিনি এক্ষেত্রে নোবেল লরিয়েট হিসেবে নিজের নাম, প্রভাব, আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সহায়তা গ্রহণ করেননি। ড. ইউনুস যদি সত্যই নির্দোষ হয়ে থাকে তারও উচিত নিজের দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা কিন্তু তিনি ভিন্ন পথে হাঁটছেন যা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা এবং ড. ইউনুসের বিজ্ঞাপন প্রচার বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র কিনা তাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী তিনটি টার্মে জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিচার বিভাগ স্বাধীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে ড. ইউনুস বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং বিদেশী ব্যক্তিদের দিয়ে বিবৃতি প্রদানের কোন প্রয়োজন বোধ করি না।
ড. ইউনুস বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনকে মোকাবেলা করতে বরাবরই পিছু পা নীতিতে আছেন যার প্রমাণ হল শ্রম আইন লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ, মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বা রায় নিজেদের পক্ষে আনার জন্য ‘ঢাকা লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেন। ঢাকা লজিস্টিকের প্রস্তাব ছিল, কিভাবে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মামলার সাথে স¤পর্কিত বিচারক, মন্ত্রী ও সচিবদের মামলার রায় প্রভাবিত করা যায়।
গ্রামীণ টেলিকমের সেই সভায় সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করে ঢাকা লজিস্টিকস এবং ড. ইউনুস সেখানে ভারচুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ড. ইউনুস শ্রমিকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্য কোর্টের বাইরে সমঝোতা করার জন্য আইনজীবীদের সাথে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন মর্মে ঘটনার তদন্ত নিয়ে একটি মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। এ থেকে প্রশ্ন দাঁড়ায় ড. ইউনুস যদি অন্যায় নাই করে থাকেন, তাহলে কেন কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন?
বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তিনি বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করেছেন এবং আইনের শাসন কে সমুন্নত রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন, তাই বলব নোবেল লরিয়েট হিসেবে আপনার উচিত হবে দেশের বিচার ব্যবস্থায় আস্থা রাখা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com