1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুই নোবেলজয়ীর আচরণভিন্নতা – অমর্ত্য সেন বনাম ড. ইউনূস

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বিশেষ প্রতিবেদক ::
এই এশিয়া অঞ্চলে একই সময়ে পাশাপাশি দেশ ভারত ও বাংলাদেশে দুই নোবেলবিজয়ীকে আদালতের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাদের একজন ভারতের অমর্ত্য সেন যার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আরেকদিকে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করার অভিযোগে তাদের করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তাদের মধ্যকার আচরণগত ও অভিযোগ মোকাবিলার পন্থার বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগে অমর্ত্য সেনকে নোটিসও দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এবার আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়ে গেল সেই নোটিস। বুধবারই সেই রায় দিয়েছে সিউড়ির জেলা আদালত। ফলে জমি বিতর্কে কিছুটা স্বস্তি পেলেন অর্থনীতিবিদ। নোটিস বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী। এই আইনি প্রক্রিয়া চলার সময়ে অমর্ত্য সেন তার বিশ্বব্যাপী বন্ধুদের দিয়ে কোন বিবৃতি দিয়েছেন তা দেখা যায়নি। কোন বেআইনী প্রভাব প্রতিপত্তি উনি ব্যবহার করেন নি। যদি ভুলে জমি দখল হয়ে থাকে, তাহলে উনি জমি ছেড়ে দিতেও রাজি আছেন বলে জানান। নিজের নাম, প্রভাব, আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সহয়তা নিয়ে কোটি টাকার জমি বেআইনীভাবে দখল করবার মতো হীন উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টায় কোন অ্যাক্টিভিজমে তিনি যাননি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ী এবং ১১৭ জন ব্যবসায়ী ও সুশীল নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এ সেটি প্রকাশিত হলে হইচই পড়ে যায়। কিন্তু হায়, একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় এটি আসলে একটি বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এ-৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ড. ইউনূসের বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। সাদাকালো পাতায় প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের জন্য তারা ৮০৭ ডলার চার্জ করে। ড. ইউনূসের পক্ষে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি ৫ কলাম ১৯ ইঞ্চি। ফলে এর পেছনে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ৭৬ হাজার ডলারের বেশি, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকারও। এটি শুধু বিজ্ঞাপন প্রকাশের খরচ। বিজ্ঞাপন বানাতে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করতে আলাদা টাকা দিতে হয়েছে। যে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে, অর্থাৎ যারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেছে, তাদের ফি আলাদা।
তবে এই ২৯ তারিখেই প্রথম টাকা দিয়ে বিবৃতি ছাপানো হয়েছে তা নয়, ড. ইউনূস ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর আগেও খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। যা গত ৭ মার্চ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠাটি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার হয়। ৭ মার্চ ওই পৃষ্ঠায় সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে ওই খোলা চিঠিটি ছাপানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনের আকার ছিল সাড়ে ৯০ কলাম ইঞ্চি। অনলাইনে পাওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার। সে হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা।
কী এমন করেছেন ইউনুস যে তার পক্ষে কেউ দাঁড়াতে হলে, বিবৃতি দিতে হলে এই পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত লোকদের দিয়ে পক্ষে বলিয়ে বড় পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ডলার খরচের মানসিকতা একজন নোবেল বিজয়ী ব্যক্তির কেনো হবে। আসলে কী করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম “শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের” ৪ হাজার ৭০০ কোটি আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে ১৭৬ জন তাদের হিস্যার ৪৩৭ কোটি টাকার জন্য অভিযোগ করেছেন। পরে অভিযুক্তরা মামলা করার প্রস্তুতি নিলে সেই টাকা তাদের দিয়ে সমঝোতা করেন।
তার আইনজীবীর একাউন্টে ১৬ কোটি টাকা পাওয়া যায় অভিযুক্তদের সাথে সমঝোতা করানোর জন্য। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ, মাইনুল হাসানের একাউন্টে পাওয়া যায় ১৭ কোটি টাকা, যা তাদের দেয়া হয় অভিযোগ উত্থাপনকারীদের ম্যানেজ করার জন্য।
এতো অভিযোগের পরও ড. ইউনূস বারবারই একটি কথা গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুটো কথাই- সরকার ড. ইউনূসকে হয়রানির করার জন্য কিছু করছে না, সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিল। এরপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যে অধিদপ্তর আছে, সেই ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন- ‘সরকার বারবার বলতেছে, সকল পর্যায়ে থেকে বলতেছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করল, নাকি শ্রমিক করল?’
শ্রম আদালতে মামলার রায় হয়ে যাওয়ার পরে আপিল করতে এসেও যিনি এধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে চান তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। তিনি নোবেলজয়ী ব্যক্তির সম্মানটুকু রক্ষার্থে যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আদালতের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন না তুলতেন তাহলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তার হয়ে বিনে পয়সায় কথা বলতো। তিনি নানা সময়ে ক্ষমতার কাছাকাছি আসার জন্য এমনকিছু হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা কখনোই জনগণের চোখে তাকে সম্মানের আসনে বসানোর সুযোগ দেয়নি। আমরা জানি, ব্যক্তি বড় হতে থাকলে তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়। ড. ইউনুসকে সুবুদ্ধি দেওয়ার মতো পরামর্শক তিনি নিজেই খুঁজে নিলে আগামীতে আন্তর্জাতিক পরিসরে টাকা খরচের ধকল থেকে হয়তো তিনি মুক্তি পাবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com