1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্নীতিচর্চার অনিবার্য পরিণতি সর্বাত্মক অরাজকতা

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪

সংবাদে প্রকাশ : জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে আমিরুল ইসলাম, আবু তাহের, ইকবাল হোসেন গং বিগত একমাস ধরে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর গ্রামবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এতে কোনও কাজ হচ্ছে না। গ্রামবাসীর বাঁধা-নিষেধ উপেক্ষা করে কৃষকের জমি, গোচরণ ভূমি, এমনকি রাস্তার মাটিও কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
বিদগ্ধমহলের কেউ কেউ মনে করেন, বেশ কয়েক দশক যাবৎ দেশের সার্বিক শাসন পরিচালনার পরিস্থিতি কার্যত যথার্থ ও একেবারেই সুসঙ্গত নয় এবং এই প্রশাসনিক এই অসঙ্গতির ফাঁকে দেশের ভেতরে কাঠামোগত সহিংতার প্রসার ঘটেছে ব্যাপকাকারে। ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেকটাই নিয়মিত ঘটনা, বার বার ঘটে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি : ১৭৮৩-৮৪ সালের দিকে মোগল বাদশাহদের রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন তবতবাই-এর সপ্রা¯িœক মন্তব্য এই ছিল যে : সমগ্র রাষ্ট্রক্ষমতার যিনি কেন্দ্রস্থল, ন্যায়দ- যাঁর হাতে, সা¤্রাজ্যের প্রতি সার্বিক আনুগত্যের যিনি প্রধান লক্ষ্য, সেই বাদশাহের ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা বা বিচারশক্তির ওপর যদি নির্ভর করা না যায়, তাহলে রাজ্যচালনার দায়িত্ব কার হাতে ন্যস্ত হবে? দেশে শান্তি রক্ষা করবে কে? প্রজাদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যই বা বজায় থাকবে কীভাবে? সময়ের ব্যবধান যদিও অনেক, তবু বর্তমানে এমন নৈরাজ্যিক অবস্থাই জায়মান আছে। অন্তত জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বর্তমান অবস্থা তাই প্রতিপন্ন করে।
এমতাবস্থায় অভিযোগ নিয়ে সম্পাদকীয় লেখার কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রতিকার করার কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিপরীতে বরং ক্ষেত্রবিশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তার পক্ষ থেকে অভিযোগকারী বা পক্ষকে ধমকে দেওয়া হলে, প্রতিবাদ করতে বা মানববন্ধন করতে বারণ করে শাসিয়ে দেওয়া হলে যা হবার তা-ই হবে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রতিনিয়ত কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নিরন্তর বৃদ্ধি যেমন পেয়েছে তেমনি নিরন্তর বৃদ্ধিই পাবে। প্রকারান্তরে প্রশাসনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠা লুটেরা চক্রের পক্ষে সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করবে, সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার আরও বাড়বে। তবতবাই বলেছেন যে : বাদশাহ যদি সা¤্রাজ্য রক্ষার কাজে অক্ষম হন, তাহলে সা¤্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিদারুণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে বাধ্য।
আধুনিককালে বাদশা না থাকলেও আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও নির্বাচিত সংসদ সদস্য কিংবা রাজনীতিকরা। এদিকে সরকারি খাস ভূমি ও গ্রামবাসীর তালুকদারি জুতের লায়েক পতিত এজমালী জায়গা, গোচারণ ভূমি ও রাস্তার মাটি মেশিন দিয়ে কেটে নেওয়া ইত্যাদির মতো নানাবিধ কর্মকা- অবাধ চলছে। রাষ্ট্রপ্রশাসনের ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নাকের ডগায় এইসব রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- চক্র গড়ে তোলে পরিচালিত হচ্ছে, প্রতিহত করা যাচ্ছে না অথবা হচ্ছে না। এইসব কর্মকা- সার্বিক বিবেচনায় অবশ্যই রাষ্ট্রবিরোধী ও অন্তর্ঘাতমূলক বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে।
সমাজসংস্থিতির সর্বস্তরে কার্যকর এইসব অনৈতিক অপকর্ম রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতরা যদি প্রতিরোধ না করতে পারেন তবে দেশ কী করে চলে? দেশের নিপীড়িত মানুষ কোথায় যাবে, কার কাছে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করবে, প্রতিকার চাইবে? এবংবিধ দুর্নীতিচর্চার অনিবার্য পরিণতি এই যে, দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজে সর্বাত্মক অরাজকতা যেমন ক্রমাগত অধিক হারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেটা ক্রমে বাড়তেই থাকবে, কীছুতেই ঠেকানো যাবে না।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা : এই কাঠামোগত সহিংসতা চিরদিন অব্যাহত থাকতে পারে না, জনগণ এর প্রতিরোধ করবেই। তখন যে সর্বব্যাপী অরাজকতা কিংবা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে তা প্রতিরোধে প্রশাসনের কীছু করার থাকবে না। বর্তমানের অক্ষমতার দায় ভবিষ্যতে শোধ করতেই হবে, ইতিহাসের অনিবার্যতা এমনই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com