স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল ওয়াহাব মজুরি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত হারিয়েছেন। এখন ক্রাচে ভর করে কোনভাবে চলাফেরা করতে পারলেও তার আয়-রোজগার বন্ধ। স্ত্রীর দিনমজুরিতে সংসার চলে। ভিটা থাকলেও তার বসবাসের ঘর নেই। খুপড়িঘরে বসবাস করেন।
মঙ্গলবার সকালে মোহনপুর গ্রামের পশ্চিম মাঠে বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল বিতরণের সময় উপহারগ্রহণকারী সবাই সারিবদ্ধভাবে বসতে পারলেও ডান পা হীন ওয়াহাব মাটিতে বসতে পারছিলেন না। ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এসময় শুভসংঘের একজন সদস্য তাকে একটি লাল কম্বল দেন। কম্বল পাবার পর কম্বলের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন আব্দুল ওয়াহাব। পরে বৃদ্ধ মায়ের জন্য আরেকটি কম্বল চাইলে তার সেই আব্দারও পূরণ করা হয়। আরেকটি মিষ্টি কালারের কম্বল দেওয়া হয় তাকে। দুটি কম্বল ক্রাচ বগলে রেখে দুই হাতে আগলে ধরে আবেগাপ্লুত ছিলেন তিনি। শুধু এই অচল দিনমজুর আব্দুল ওয়াহাবই নয় বিধবা সরফুল বিবি, মরিয়ম বিবি, সকিমুল বিবির মতো দিনমজুর পরিবারের নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরা এসেছিল বসুন্ধরার শীতের উপহার নিতে। দুর্গম এলাকায় এভাবে বিড়ম্বনা এড়িয়ে সাধারণত কখনো কেউ কোন সহায়তা বিতরণ না করায় এমন ঘটনায় বিস্মিত ছিলেন সবাই। তারা বসুন্ধরা গ্রুপের এই শীত উপহার গ্রহণ করে মন থেকে দোয়া করেছেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘের সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৫ দিন ধরে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিড়ম্বিত দুর্গম উপজেলা মধ্যনগর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জের তুলনামূলক দুর্গম গ্রামগুলোতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। পুরো জেলায় ৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শুধু শীতার্ত মানুষজনই নয়, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় বয়স্ক মানুষ, দিনমজুর, দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুরা বসুন্ধরা গ্রুপের শীত উপহার হিসেবে পেয়েছে। তারা আরো জানান, মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গম গ্রাম মোহনপুরে তিন শতাধিক শীতার্ত মানুষদের কম্বল বিতরণ করা হয়। দুপুরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দুর্গম গ্রাম দুর্বাকান্দা এলাকায় আরো ৬শ শীতার্ত পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
কম্বল বিতরণের সময় বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান শীতার্ত মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা কোন দান ও অনুদান নয়। এটি হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে হাওরাঞ্চলের অসহায় শীতার্ত মানুষদের জন্য উপহার। আমরা দুর্গম এলাকা খুঁজে খুঁজে যেখানে সাধারণত কোন সহায়তা পৌঁছেনা সেসব এলাকায় শুভসংঘের সদস্যদের নিয়ে গিয়ে উপহার পৌঁছে দিচ্ছি। উপহার পেয়ে তারা বিস্মিত ও খুশি। দেশ ও মানুষের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
মোহনপুর গ্রামের সমাজসেবী আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন দুর্যোগে, দুর্বিপাকে সহায়তা চেয়েও পাইনা। কারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় থাকায় আমাদের ওখানে এসে কেউ কষ্ট করে সহায়তা দিতে চায়না। তাই হতদরিদ্র মানুষরা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজ এমন একটি এলাকায় আমাদের ঘরে এসে শীতের কম্বল উপহার দিয়ে গেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠী আমাদের সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এসে এই তীব্র শীতের মধ্যে কম্বল বিতরণ করছে। সুনামগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান রইল।