1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বালু-পাথর মহাল লুটপাট করার অধিকার কারও নেই

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪

সুনামগঞ্জ তথা বিশেষ করে পুরো ভাটি অঞ্চলে হাওর কিংবা বিল-নদী ও বালু-পাথর মহাল ইজারা দেওয়ার প্রথা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবিক সংকটের উৎস হয়ে উঠেছে। প্রকারান্তরে জনগণের পক্ষে প্রচলিত ইজারাপ্রথার চাপ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মহল সেটা উপলব্ধি করতে পারছেন এবং তাঁরা তাঁদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছেন।
গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি ২০২৪) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সে-উদ্বিগ্নতার ঝাঁজ পরিলক্ষিত হয়েছে। বলা হয়েছে, “সুনামগঞ্জের পাহাড়ী নদী যাদুকাটার ইজারা বাতিলের দাবি জানালেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা)’র নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে হাওরের বাঁধ, কৃষি, নদী ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই দাবি জানান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সভায় বক্তব্য রাখার সময় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনাদের আর কীভাবে বললে, আপনারা যাদুটাকা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারবেন। আপনারা কী পারেন না এক বছরের জন্য যাদুটাকার লিজ বাতিল করে দিতে। দয়া করে কর্মসংস্থানের দোহাই দেখাবেন না। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্যজীবীরা ওখানে গিয়ে মাছ ধরতে পারে না। বালু উত্তোলনকারীদের চেয়ে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা বেশী। আর মাছের ভোক্তার পরিমাণ বালু উত্তোলনকারীদের চাইতে অনেক বেশী। আপনারা কী কোন দিনও আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেবেন না। ফিতা নিয়ে শুধু জায়গা মেপে আসলে হবে না, আপনারা তো জানেন, ফিতার মাপ ওরা (ইজারাদাররা) পাল্টে দেয়। সেক্ষেত্রে শাস্তি দিতে বাধা কোথায়।”
আমরা ‘বেলা’র নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে সুনামগঞ্জের তথা বিশেষ করে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সহৃদয় সহানুভূতির জন্যে আন্তরিক অভিবাদন জানাই। তিনি যখন প্রশাসনের প্রতি যাদুকাটার লিজ বাতিলের আহ্বান জানান তখন বুঝাই যায় যে, যাদুকাটা ও ধোপাজান বালুমহালে উদ্ভূত সংকট নিয়ে তিনি বিশেষভাবে ভাবিত ও সংকট নিরসনের চেষ্টায় নিয়োজিত আছেন, এ জন্যও তাঁকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
যাদুকাটা-ধোপাজান বালু-পাথর মহালের সার্বিক পরিস্থিতি এমনিতেই আপদমস্তক একটি জটিল ও সংকটাপন্ন বাস্তবতা। এর নিরসন চাই। কিন্তু নিরসন করতে গিয়ে সংকটকে সংকটাপন্ন না করে আরও তীব্র করে তোলার কোনও মানে হয় না। যখন ‘বেলা’র নির্বাহী প্রধানের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আপনারা কী পারেন না এক বছরের জন্য যাদুটাকার লিজ বাতিল করে দিতে। দয়া করে কর্মসংস্থানের দোহাই দেখাবেন না। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্যজীবীরা ওখানে গিয়ে মাছ ধরতে পারে না। বালু উত্তোলনকারীদের চেয়ে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা বেশী। আর মাছের ভোক্তার পরিমাণ বালু উত্তোলনকারীদের চাইতে অনেক বেশী।” তখন প্রকৃতপ্রস্তাবে নিরসনের বদলে সমস্যা-সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে এবং সত্য-মিথ্যার এক অপরূপ সংমিশ্রণে জাত জটিলতা আরও প্রলম্বিত হয়ে প্রকারান্তরে ইজারদারদের অনুকূলে ঘুরপথে সুবিধাপ্রাপ্তির পথকে নিষ্কণ্টক ও প্রশস্ত করে তোলে।
ভুলে গেলে চলবে না, যাদুকাটা কিংবা ধোপাজান কোনও কালেই জেলেদের মাছ শিকারের জন্য প্রশস্ত জলাধার ছিল না। এই মহালগুলো মাছ শিকারের জন্য বিখ্যাত নয়, বহুকাল থেকে বিখ্যাত বালু-পাথর আহরণের জন্য। এই সব পাহাড়ি নদী-অববাহিকার মানুষেরা বালুপাথর উত্তোলনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বালু-পাথর ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা অর্জনের কর্মকা- বালু-পাথর লুটপাটের কর্মকা-ে পর্যবসিত হয়েছে। প্রকারান্তরে হাজার হাজার বারকি-শ্রমিকের উদ্বৃত্তশ্রম লুণ্ঠনের ফাঁদে পরিণত হয়েছে মহালগুলো এবং বারকি শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন, এলাকায় ক্রমাগত বাড়ছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা। যাদুকাটা থেকে ‘বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্যজীবীরা ওখানে গিয়ে মাছ ধরতে পারে না’ এবংবিধ বচন একটি মিথ্যাচার। এইভাবে অযৌক্তিক যুক্তি উত্থাপন করে ইজারাদারদের কর্তৃক “হাওরের বাঁধ, কৃষি, নদী ও পরিবেশ সংকট নিরসনের” বিষয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের সার্বিক কর্মকা- ঠেকানো যাবে না। বিষয়টা সত্যিকার অর্থেই জটিল ও বিস্তৃত একটা কীছু। এই সম্পাদকীয়র স্বল্প পরিসরে সব কীছুর অনুপুঙ্খ বয়ান-বিশ্লেষণ হাজির করা যাবে না। আমরা কেবল বলতে চাই ‘লিজ বাতিল’ অর্থাৎ বিশেষ ক্ষেত্রে ইজারা বাতিলের বিশেষ ব্যবস্থা সত্যিকার অর্থে সংকট নিরসন বা সমাধানের কার্যকর পথ নয়। ইজারাদাররা মুনাফা লাভের লোভে প্রশাসনকে পটিয়েই আইনি বৈধতার ফাঁকে প্রকৃতপ্রস্তাবে অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেনÑ তাতে কোনও সন্দেহ নেইÑ এতোদিন যেমন চালিয়ে এসেছেন। অভিজ্ঞমহলের ধারণা : যাদুকাটার লিজ বাতিল করা কোনও কাজের কীছু নয়। বরং ইজারা বাতিলের বদলে প্রচলিত ইজারাপ্রথাটিই উচ্ছেদ চাই। এমন ব্যবস্থা চাই যাতে বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা বালু-পাথর মহাল লুটপাট করার সুযোগ না পায়, প্রাকৃতিক সম্পদ যাতে দুয়েক জনের ব্যক্তিগত সম্পদ না হয়ে উঠে। যদি ইজারা দিতেই হয়, তবে এমন ইজারানীতি চাই, যে-নীতিতে বালু-পাথর মহালের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটের কোনওভাবেই কোনও সুযোগ থাকবে না। মনে রাখা ভালো যে, বালু-পাথর জনগণের সম্পদ, এইসম্পদ লুটপাটের অধিকার কারও নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com