বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। বাংলাদেশে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে অনেক শহর-নগর। নদীকে ঘিরেই মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশ। কিন্তু ক্রমাগতভাবে নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। প্রতিনিয়ত নদীর তলদেশ ভরাট, দখল আর দূষণে সয়লাব হচ্ছে। মৃতপ্রায় নদী নিয়ে তাই প্রায়ই পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। নদী সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার পালন করা হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।
১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া (বিসি) ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বিসি রিভারস ডে পালন দিয়ে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদীবিষয়ক আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলো দিনটি ‘নদী দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা ক্রমাগত বিস্তৃতি লাভ করছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরপর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়।
সুনামগঞ্জেও এই দিবসটি পালিত হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অঙ্গীকার বাংলাদেশ’ সুরমা নদীতে পুষ্প অর্পণ করে নদীকে সম্মান জানিয়েছে।
আমাদের হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জে নদীর নাব্যতা সংকট দীর্ঘদিনের। সুরমার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে আমাদের একফসলি বোরো ফসল প্রতিবছরই সামান্য বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। তাছাড়া অকাল বন্যার কবলে পড়ে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।
বিশ্ব নদী দিবসকে শুধু দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নদীর নাব্যতা সংকট কাটাতে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। দূষণ রোধসহ নদীর তলদেশ খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সামাজিক আন্দোলনের গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে নদীর সাথে আমাদের হাওরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকা জড়িত। নদীর নাব্যতায় উদ্যোগ নিলে কৃষি নির্ভর এই জেলা থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারে।