1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার প্রদান প্রসঙ্গে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪

“সুনামগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে তিন শত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লুঙ্গি উপহার দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন মিলনায়তনে এই উপহার প্রদান করা হয়।”
পত্রিকায় এমন সচিত্রসংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উপহার তো উপহারই, এর সঙ্গে কেবল জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা, অন্য কীছু নয়, কোনও রাজনীতি নয়। সত্যিকার অর্থেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির ভালোবাসার পাত্র, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এইরূপ প্রীতিপ্রদর্শনের দৃষ্টান্ত তৈরির জন্যে পৌরকর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
কিন্তু তাঁদেরকে লুঙ্গি অথবা জামা-ছাতি ইত্যাদি উপহার দেওয়ার সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসটা আজকের নয়। অতীতেও এবংবিধ প্রকরণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রীতিপ্রদর্শনের উদাহরণ তৈরি করা হয়েছে। এইভাবে প্রীতিপ্রদর্শন প্রকৃতপ্রস্তাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে কোনও ভূমিকাই রাখে না। জানা কথা ব্যতিক্রম বাদে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ দরিদ্র অথবা দরিদ্রসীমার নিচের জীবনমানের অধিকারী, তাঁদেরকে একটি লুঙ্গি, জামা, ছাতা কিংবা শীতবস্ত্র উপহার দেওয়ার কোনও মানে হয় না। এইটুকু প্রীতি তাঁদের জীবনকে উন্নত, সুখি ও সমৃদ্ধ করতে পারে না। অথচ স্বাধীনতা যাঁরা এনে দিলেন, তাঁদের জীবন সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থাৎ অর্থে-বিত্তে ক্ষমতায় তাঁদের সম্পন্ন কিংবা সমাজসংস্থিতির নিয়ন্ত্রক হওয়ার কথা ছিল। যাঁরা স্বাধীনতার হোতা, তার কীছুই তাঁরা হতে পারলেন না। বলতে গেলে স্বাধীনতার সুফল থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন এবং ফল লাভের অধিকারী হয়ে উঠলো স্বাধীনতাবিরোধীরা। উদাহরণ দিতে চাই না, দিলে এই ছোট সম্পাদকীয়তে স্থান সংকুলান হবে না। কেবল বলি, পরিতাপের বিষয় ১৯৭১-উত্তর কয়েক বছরের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জীবনকে আর্থনীতিক নিঃস্বতার পঙ্কিল আবর্তে ফেলেÑ বলতে গেলে একরকমÑ ব্যর্থ করে দিয়েছে। স্বাধীনোত্তর সুখি, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জীবন দেশের কোনও মানুষের জন্যেই নিশ্চিত হলো না, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বিগত নির্বাচনে বিরাজিত জটিল পরিস্থিতি ও সংঘাতশঙ্কুল আবহÑ দেশি-বিদেশি সমীকরণ মিলে এক ভয়ঙ্কর রাজীতিক পরিবেশ।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন তাঁদের প্রাণকে যুদ্ধের ময়দানে পণ রেখে। জাতির জন্যে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার এই মহান অবদানের স্বীকৃতি তাঁরা কি পেয়েছেন? এই প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে ভাবলে বলাই যায় যে, একটি লুঙ্গি উপহার দেওয়ার পেছনে যতই ভালোবাসা থাক, সেটা এই মুহূর্তে কোনও মূল্য বহন করে না। তবে মূল্য বহন করতে পারে যদি জীবন সায়াহ্নে উপনীত হওয়া তাঁদের জীবনমানের উন্নয়ন করা যায়, যদি তাঁদেরকে সুখি, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এছাড়া রয়েছে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা। এইসব দিক বিবেচনা করে পৌরসভার উচিত হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করে তাদের চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে সহজে সম্ভব করা যেতে পারে এমন কোনও উপায় অবলম্বন করা, একটি লুঙ্গি উপহার দিয়ে বেকার ভালোবাসা প্রকাশ নয়, যদিও সেটা হবে একটু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা, কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের যাপিত জীবনে অধিক কার্যকর ও অর্থবহ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com