বোধ করি বিশ্বের সব দেশের সমাজপরিসরেই ‘প্রভাবশালী’জনেরা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি হিসেবে বিরাজ করেন। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিজ্ঞমহলের ধারণা কোনও সমাজে কোনও প্রভাবশালী শ্রেণি কিংবা এমনি বিশেষ মহলের এমনি এমনি উদ্ভব ঘটে না। পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ভেতরে উদ্ভূত একটি মূর্তনির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কের অধীনে সাধারণত প্রভাবশালী মহলের উদ্ভব ঘটে। এটি পুঁজিবাদী সমাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
পুঁজিবাদের মূল ভিত্তি হলো সম্পদে ব্যক্তিমালিকানার অধিকার এবং সম্পদ হলো ব্যক্তির সামাজিক ক্ষমতার উৎস। এই ক্ষমতা রাষ্ট্র, সমাজ, দেশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং উক্ত ক্ষমতাধরেরাই রাষ্ট্র-সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে জনগণের বিপরীতে প্রভাবশালী শ্রেণি হিসাবে আবির্ভূত হয়। এই প্রভাবশালীরা সমাজের সর্বস্তরে বিভিন্নরূপে ও কৌশলে বিরাজ করে। দেশের উচ্চ পর্যায় থেকে নি¤œ পর্যায়ের প্রতিটি স্তরে তারা কাজ করে। এমনকি আর্থনীতিক স্বার্থ আদায়ের স্বার্থে লোকালয়ের অলিগলি নিয়ন্ত্রণের পর তারা নদী, খাল, বিল, মাঠ, ময়দান, চর ইত্যাদি প্রকৃতির সকল স্থানে তাদের প্রভাব খাটায়। গত বুধবারে (২৭ ডিসেম্বর ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, প্রভাবশালীরা নদীতে তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বাঁধ দিয়েছে। পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে, ‘নদীতে প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধ : জলাবদ্ধতায় জোয়ালভাঙ্গা হাওরে বোরোচাষ অনিশ্চিত’।
অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, সংশ্লিষ্ট মহল যদি অচিরেই নদীতে এই অবৈধ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর না করেন তবে বোরোচাষ ব্যাহত হয়ে কৃষকদের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। তাছাড়া জানা কথা, ধানচাষ ব্যাহত হলে প্রকারান্তরে খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এতে করে জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পথও প্রসারিত হয়। অর্থাৎ ‘নদীতে প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধ নির্মাণ’ জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির পরিপন্থি কাজ, এবংবিধ কাজ উন্নয়নকামী ও কৃষকবান্ধব সরকারের পক্ষে বরদাস্ত করা কীছুতেই সঙ্গত নয়।