1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শুভ বারতা : প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

জগৎ সংসার শান্ত স্নিগ্ধ। নিশিথের গাঢ় অন্ধকারে চারিদিক সমাচ্ছন্ন। দূর আকাশের নিকষ অন্ধকারে ২/১ টি তারা তাদের ক্ষিণ দ্যুতি নিয়ে জ্বলছে। কেবল শোনা যাচ্ছে নিশাচর প্রাণীদের বিকট চিৎকার ধ্বনি। আর অদূরে মেষ পালকের চৌকি দিচ্ছে মেষ। হঠাৎ আকাশ থেকে মঙ্গল সঙ্গীত ভেসে এল! ঊর্ধ্বলোকে ঈশ^রের মহিমা, পৃথিবীতে শান্তি। স্বর্গের রাজাধিরাজ আজ কাঙ্গাল বেশে ধুলার পৃথিবীতে আবির্ভূত। শান্তিরাজ আজ আমাদের সামনেই শায়িত। তিনি রাজাধিরাজ প্রভুদের প্রভু হয়েও এই শীর্ণ গোশালায়।
এই বার্তাই আজ প্রকাশিত পাপী আশ্বস্ত হোক- জগৎভ্রাতা অবতীর্ণ। তিনি কলুষ নাশন, তিনি পাপহারী তোমার হৃদয় আজ শুচি শুভ্র হবে। নব ভ্রাতা শিশুবেশে মাতৃক্রোড়ে সমাসীন। আনন্দ কর, উল্লসিত হও। সমস্ত জগতে আজ সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার বিজয় সংগীত বেজে উঠুক। এই মঙ্গল সংগীতের উদার রাগিণী আজ আমাদের মনের সকল কলুষতা বিলুপ্ত করে দিক। আসুন আমরাও সমস্বরে দাঁড়িয়ে প্রাণ খুলে গাই “শুন স্বর্গদূতের রব, নবজাত রাজার স্তর।”
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি অবস্থিত রয়েছে একটি প্রবাল দ্বীপ। নাম ক্রিসমাস আইল্যান্ড। দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে ৩৫ মাইল, প্রস্থে ২৫ মাইল। ১৭৭৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে পথ হারিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরছিলেন জাহাজ নিয়ে ক্যাপটেন জেমস বুক। হঠাৎ এই প্রবাল দ্বীপটি তার নজরে এলো। দিনটি ছিল ২৪ ডিসেম্বর। জনমানবহীন এই নিঃসঙ্গ দ্বীপটির মাঝে বসে তিনি উদযাপন করেছিলেন এই ক্রিসমাস উৎসব। আর তাই নাম রেখে গেছেন ক্রিসমাস দ্বীপ। বাংলাদেশে আমরা খ্রিষ্টের জন্ম উৎসবের নাম দিয়েছি ‘বড়দিন’। কারণ এ দিনটিতে এমন ঘটনা ঘটেছিল যা যথার্থই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়। এই ঘটনাটি পৃথিবীতে একটিবারই ঘটেছিল আর কোনদিন ঘটবে না। ঘটনাটি কী? ঘটনাটি হলো: ঈশ^র আকারে প্রকারে মনুষ্য হইলেন। তিনি মাংশে মূর্তিমান হইলেন, পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে প্রবাস করিলেন (ফিলিপীয় ২:৭-৮)। একটি বালক আমাদের জন্য জন্মেছেন একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে (যিশাইয় ৯:৬)। আমাদের পরিত্রাতা আমাদের প্রভু আমাদের ত্রাণকর্তা আজ শিশু বেশে বৈৎলেহম জন্মেছেন আজকের এই মাসে বাংলাদেশের খ্রিষ্ট সমাজ আনন্দে উদ্বেলিত। পশ্চিম বিশে^ আনন্দ, তাদের আলোকসজ্জা বর্ণনা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নাই। এতো আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে আবার যানবাহনের দুর্ঘটনায় শত শত মানুষও প্রাণ হারায়, বৈদ্যুতিক ঘটনা এবং অধিক মদ্যপান জনিত কারণে পশ্চিমা বিশে^ এবং এশিয়ার ফিলিপাইন দেশেও প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটে। তাই প্রশ্ন জাগে মনে এতো আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়, জীবনকে উপভোগের মধ্যেও মৃত্যু, বিচ্ছেদ, দুঃখ মানুষের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও পিতা ঈশ^রের এক মহৎ পরিকল্পনা এক বিরাট আত্মত্যাগ, এক অপরিমেয় প্রেম আমরা দেখতে পাই। পবিত্র বাইবেলের একটি অংশে আমরা দেখি ২করিন্থীয় ৮:৯ পদ কেননা তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ জ্ঞাত আছ, তিনি ধনবান হইলেও তোমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান হও।” এই বচনরতেœর প্রথম বিষয় হলো অনুগ্রহ তার মাহাত্ম্য তার অনুগ্রহ, আর তা হলো বৈৎলেহমের গোশালা থেকে কালভেরীর ক্রুশ পর্যন্ত বিদ্যমান।
প্রভু যীশুর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অনুগ্রহ ও প্রেমের সাক্ষ্য বহন করে। সে প্রেম অযোগ্যতা দেখে বিচার করে না। ক্রোধে বিচলিত বা দিশেহারা হয় না, প্রতিশোধ গ্রহণ করেনা- আত্মদানে মহিয়ান হয়- সেই প্রেম প্রকাশের জন্য প্রভু যীশু এসেছেন।
একটা দৃষ্টান্ত- যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ামি শহরে এক দম্পতির মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না কয়েক বছর। একদিন স্ত্রী পাঁচ হাজার ডলারের বিনিময়ে এক গুন্ডাকে নিযুক্ত করলেন তার স্বামীকে হত্যার জন্য। ঘটনাক্রমে সব চক্রান্ত ধরা পড়ল। মহিলা কয়েদখানায় আট বছর থাকলেন। অবশেষে একসময় তার স্বামী নিজেই জামিনদার হয়ে স্ত্রীকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন। এই হচ্ছে অনুগ্রহ। এই সেই প্রেম সেই ক্ষমা যার বিনিময়ে প্রভু যীশু এই মর্ত্য ভূমিতে মশীহ রূপে প্রকাশিত হয়েছেন মানব জাতিতে ক্ষমা করে পরিত্রাণ দান করতে।
দ্বিতীয়ত খ্রিষ্টের আত্মত্যাগ তিনি ধনবান হইলেও তোমাদের জন্য দরিদ্র হইলে। দূতগণ নিয়ত তার স্তরগান করতো। তিনি আমাদের জন্য সবকিছু পরিত্যাগ করলেন দরিদ্র হলেন। মর্ত্যদেহে মর্ত্যজগতে নেমে এলেন। মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস পবিত্র বাইবেলে আছে। তিনি নিজ প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন। অর্থাৎ ঈশ^র তার আদর্শ ও গুণাগুণ দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ এই মানুষের মধ্যেই আজ কেন এতো হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা? কেন আমরা এত সব অলীক ও ভ্রান্ত সৌধ গড়ছি? কেন যুদ্ধ হানাহানি লোভ স্বার্থপরতার বেড়াজালে মানুষ এত সংকীর্ণ। আমরা জানি একটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের পূর্বে এয়ারপোর্ট কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে তার সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের মাঝে অনেকে আছি যাদের ঈশ^রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। হয়তো সামনে কেবল অন্ধকার কোন আশা উদ্দীপনা নেই। নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে। কিন্তু মুক্তিদাতা প্রভু যীশু জন্মতিথি বড়দিনের মধ্য দিয়েই আপনার জন্য সুসংবাদ রয়েছে। ঠিক যখনই আপনি প্রভু যীশুর হাতে সব ভার তুলে দেন। তখন আপনি স্পষ্টভাবে বলতে পারেন- প্রভু তুমি আমার আমি তোমার।
১৮৪২ খ্রী: ৮ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ষোল বছরের এক তরুণ উইলিয়াম এগলী বিশে^র সর্বপ্রথম ক্রিসমাস কার্ড এঁকেছিলেন। কার্ডটি লম্বায় ৫.র্৫র্ প্রস্থে ৩.র্৫র্ ছিল। বৃটিশ মিউজিয়ামে তুলে রাখা এই কার্ডটির ভিতর লেখা আছে “ঈশ^র তুমি আমার-আমি তোমার।” ম্যারি ক্রিসমাস। এমন নিঃস্বার্থভাবে কি আমরা প্রভুকে আমাদের সব কিছু তুলে দিতে পারিনা? আসুন আমরা প্রভুর চরণে সমর্পিত হই। এবারের শুভ বড়দিন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অনন্ত শান্তি বয়ে নিয়ে আসুক। পৃথিবীর সকল মানুষ শান্তি লাভ করুক। আমেন।
(লেখক, সভাপতি: সুনামগঞ্জ প্রেসবিটারিয়ান গীর্জা ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com