1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আগুনে কার লাভ, কার ক্ষতি : আবু জাফর মিয়া

  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই দেশে চলছে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিয়ে সরকার বিরোধী অধিকাংশ দলগুলো অনবরত দেশে হরতাল-অবরোধ দিয়েই যাচ্ছে। তারা শুধু হরতাল-অবরোধ দিয়েই থেমে থাকছে না, নৃশংসভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে যানবাহন। গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় তারা চারটি যানবাহনে আগুন দেয়। এর মধ্যে দুটি বাস, একটি ট্রাক এবং একটি পিকআপ ছিল। এছাড়া তারা গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২৭৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। যার লক্ষ্য ছিল চলমান নির্বাচন বাধাগ্রস্ত কিংবা বানচাল করা।
সরকারের বর্তমান নির্বাচন বিরোধীরা বলছে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা জনস্বার্থে তারা এহেন ন্যাক্কারজনক কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতগুলো গাড়িতে যে আগুন দেওয়া হলো, এসব গাড়ি চালিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো, তারা এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে? এক্ষেত্রে কি সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা হচ্ছে, নাকি ক্ষুণœ হচ্ছে? তাদের অতীত কর্মকা-ের ধারাবাহিকতায় পরিষ্কার বোঝা যায়, কেবল সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্যই তারা বাস-ট্রেনে প্রতিনিয়ত আগুন দিচ্ছে, যাতে সাধারণ জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা ভীতি তৈরি হয়।
আগুন সন্ত্রাসের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের নির্বাচন বানচালের এই জঘন্য পরিকল্পনার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত। এর আগেও তারা আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়েছে। আগুন লাগানোর জন্য পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছ। এসব পেট্রোল বোমায় প্রাণহানি হয়েছে অসংখ্য মানুষের। এবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পোড়াতেও দ্বিধা করেন নি! একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসে দেওয়া আগুন মানে শিক্ষার্থীদের মনে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, এই চেষ্টা তারা ২০১৪ সালে করেছে, সফল হতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। কারণ জনগণ সরকারের সাথে আছে। মানুষ চায় একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। যে নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে তাদের মন মতো সরকার গঠন করবে।
অথচ এই জোট মানুষকে ভয় দেখিয়েই যাচ্ছে। ভয় পেয়ে কেউ যেনো ঘর থেকে বের না হয়। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় তারা গাড়ি-ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেশবাসীর মনে আতংক তৈরি করতে চাচ্ছে। সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন যাতে না হয়, সেজন্য প্রতিবার তারা এমন নোংরা খেলায় মেতে ওঠে। পরে দোষ দেয় সরকারের ঘাড়ে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর সময় আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে চলা প্রায় লাগাতার হরতাল-অবরোধে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।
রাজনীতি দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। কোন মানুষের যদি অন্য মানুষের সহযোগিতা করার সদিচ্ছা কিংবা মানসিকতা থাকে, তাহলে সে কীভাবে এতটা নৃশংস হতে পারে? সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কী কখনোই সম্ভব? নির্বিচারে বাসে- ট্রেনে আগুন দেয়া এটাই প্রমাণ করে যে, তারা দেশ ও দেশের জনগণের সঙ্গে নেই। এই সরল সত্যটা নাশকতার সঙ্গে জড়িত বা তাদের নির্দেশদাতারা বুঝতে পারে না। তারা জানে না যে, বাংলাদেশের মানুষ ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’র মত সংগীত দর্শনে অভ্যস্ত। এরকম নৃশংসতা করে এই দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না।
লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহনের সাথে যুক্ত ড্রাইভার-হেলপার এবং মালিক পক্ষের এখন রোজগার বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কাজের সন্ধানে বাইরে বের হতে পারছে না। এক কথায়, ভীতির সঞ্চার হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে, যাতে করে নির্বাচন বানচাল হয়। এটাই তাদের লক্ষ্যই এটা ছিল। এদের কাজ হচ্ছে, দেশের ভিতরে সবসময় ঝামেলা লাগিয়ে রেখে সরকার ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করা। আর এজন্যই আগুন সন্ত্রাস তাদের এত পছন্দ।
কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের হানাহানি পছন্দ নয়। তাদের বিশ্বাস, করে আগুন লাগিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে যারা দেশ অস্থির করে তারা আর যাই হোক ভাল মানুষ না। দেশের উৎসবমুখর ভালো দিন তাদের কখনোই সহ্য হওয়ার কথা নয়। আমরা দেখেছি, তারা একটা লক্ষ্য ঠিক করে অরাজকতা তৈরি করে। এর জন্যে সব সময় একটা উসিলা খোঁজে। পাঠুক দেখুন, এবারও তাদের উসিলা নির্বাচন। আর লক্ষ্য অরাজকতা সৃষ্টি এবং এর দায় সরকারের উপর চাপানো। যাতে সাধারণ মানুষ নির্বাচন থেকে আগ্রহ হারায় এবং নির্বাচনটা বানচাল হয়।
জনগণের স্বার্থে তারা কখনই রাজপথে নামে না। মানুষের স্বার্থে নামলে নির্বাচনে নামতো। গাড়ি-ট্রেনে আগুন দেওয়ার বদলে দেশের স¤পদ রক্ষা করতো। ২০১৩ সাল থেকে আগুন সন্ত্রাসকে তারা নিত্য সঙ্গি করেছে। দেশের স্থিতিশীল ও গুছানো পরিবেশ তাদের ভালো লাগছে না। যার সব শেষ উদাহরণ মোহনগঞ্জ একপ্রেস ট্রেনে আগুন। মা ও শিশুসহ চার জনের মৃত্যু। অথচ এই মানসিকতার মানুষেরাই দুইবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে সরকার চালিয়েছে। সেখানেও আমরা দেখেছি ২১শে আগস্টের মত ভয়াবহ নৃশংসতা। এরা যখানেই যাক কী সরকারে কী সরকারের বাইরে প্রতিহিংসা তাদের জীবন দর্শন। দেশের মানুষ আসলেই দেখছে এই দর্শন তাদের কোথায় নিয়ে যায়?
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক সাধারণ স¤পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com