মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে।
যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশব্রতের মহা দীক্ষা লভী
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণচুমি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আ¤্র কাননে বাঙালির স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার লাল টকটকে সূর্য বাংলার ভাগ্যাকাশে আবার উদয় হতে সময় নিয়েছিল প্রায় ২১৪ বছর। ব্রিটিশ শোষকদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার চাবিটি ছিনিয়ে নিতে ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, ভগৎ সিং, মাস্টার দা সূর্য সেনদের লেগেছিল প্রায় ১৯০ বছর। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে এ ভূ-খ-ের মানুষ ভেবেছিল তারা স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মের মধ্য দিয়ে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামক যে দুই ভূ-খ-ের একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, সে রাষ্ট্রটি স্বাধীনতার কয়েক মুহূর্ত পরই বুঝতে পেরেছে যে, দুই ভূ-খ-ের একটি রাষ্ট্র বেশি দিন একত্রিত হয়ে চলতে পারবে না। কারণ দুই অঞ্চলের মানুষ, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, দর্শন, চিন্তা-চেতনা, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস ছিল সম্পূর্ণই আলাদা। এছাড়াও এই দুই ভূ-খ- মাঝে দূরত্ব ছিল প্রায় ১৭,০০০ (সতের হাজার) মাইল এবং দুই অঞ্চলের মাঝে অবস্থান ছিল ভিন্ন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের, যার নাম ভারত। জাতিসত্তার পরিচয়ে বাঙালি সর্বদাই আপোসহীন। স্বাধীনতার ৭টি স্তম্ভ পার হয়ে বাঙালি একদিন পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। সেই ৭টি স্তম্ভের প্রথম ও প্রধান ধাপ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী স্তম্ভ বা ধাপগুলো ছিল ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬২’ এর শিক্ষানীতি, ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র, জনতাসহ আবালবৃদ্ধ বণিতা অসীম সাহসিকতা বুকে ধারণ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশে^র তৎকালীন এক শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং ২৪ বছরের সকল প্রকার শাসন-শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন, অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে এবং ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে সৃষ্টি করে এক স্বাধীন, সার্বভৌম, নবীন রাষ্ট্র “বাংলাদেশ”। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভূ-খ-ের নামকরণ করেন “বাংলাদেশ”।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বাংলার মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার জন্য। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান থেকে জীবিত মুক্ত করে আনতে যে মানুষেরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভারতের ‘লৌহ মানবী’ নামে খ্যাত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। শ্রীমতি গান্ধী বাংলাদেশের যুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রমানের মুক্তির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করেন এবং বিশ্ব জনমত গঠন করেন। তাছাড়াও যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর আশ্রয় দান, বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র প্রদানের জন্য শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সরাসরি অনুমতি প্রদান করেন। ভারতের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রধান লে. জেনারেল জগৎজিৎ সিং আরোরাকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য শ্রীমতি গান্ধী নির্দেশ প্রদান করেন। তাঁর নির্দেশক্রমে ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে যৌথবাহিনী গঠন করে। যৌথবাহিনী ৪ ডিসেম্বর থেকে যখন জল-স্থল ও অন্তরীক্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয় অর্জন করে।
বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পাকিস্তানি সরকার ০৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে সরাসরি চলে যান লন্ডনে এবং সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি আসেন ভারতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহনকারী বিমান যখন ভারতের মাটি স্পর্শ করে, তখন বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে সরাসরি উপস্থিত হন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে একজন রাষ্ট্রপতির যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও বিশাল জনসভার আয়োজন করে ভারত বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নেয়।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের অপরাহ্ণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন সোনার বাংলায় পদার্পণ করেন। লক্ষ লক্ষ জনতা বঙ্গবন্ধুকে বরণ করার জন্য ঢাকার রাজপথ ও রেসকোর্স ময়দানে জড়ো হয়। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে এসে জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন- “…বাংলার মানুষ আজ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের স্বাদ পূর্ণ হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশে এসে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করতে শুরু করেন, তখন দেখেন সমস্ত দেশের প্রায় সকল রাস্তা-ঘাট, রেল লাইন, ব্রিজ, কল-কারখানা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে পাক হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশের তৎকালীন অর্থনৈতিক অবস্থাকে ব্যঙ্গ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হ্যানরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিলেন- ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’।
বঙ্গবন্ধু সেই নিঃস্ব, দুর্বল বাংলাদেশ পুনর্গঠন করার জন্য মনোনিবেশ করেন এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য দাঁড় করান। বাংলার মানুষকে শিক্ষা-দীক্ষা-অর্থনীতি-সংস্কৃতি ও সর্বোপরি উন্নত জীবন প্রদান করার জন্য আত্মনিয়োগ করেন। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে দেশকে সঠিক ও নির্ভুল পথে পরিচালনা করেন।
১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি তাদের ৭১’এর পরাজয়কে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে নি। তাই তারা আবার জেগে উঠে ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্টে। সেইদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ^াসঘাতক বাঙালি জাতির বুলেটের আঘাতে শহিদ হন। সেই সাথে শাহাদাৎ বরণ করেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ মোট ৩৫ জন। ঘাতকেরা ছয় বছরের ছোট্ট রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। বুলেটের নির্মম আঘাতে ঝাঁজরা করে দিয়েছে ছোট্ট রাসেলের ছোট্ট বুকটাকে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস। তবে বরাবরের মতোই সাধারণ জনগণ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। স্বৈরাচারের শেকল ভেঙে বাংলাদেশ গর্বিত জাতি হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনাকে রুদ্ধ করতে পারেনি। আজকের বাংলাদেশ তাই নতুন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে নতুন করে আশার আলোয় উদ্ভাসিত হতে হয়। কারণ বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটেছে। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে বলীয়ান হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের বলিষ্ঠ অবস্থানই তার বড় প্রমাণ। সরকারও অত্যন্ত সাফল্যের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই অনেকগুলো বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এর ফলে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য এই বিচার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে চলেছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার অনেক কমে এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবিত উন্নয়নের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নও পূরণের পথে। তাছাড়া সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ^ মানচিত্রে স্থান করে নেবে। আর এভাবেই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে।
আজকের বাংলাদেশের সাফল্যগাথা বলে শেষ করা যাবে না। দেশের মানুষের মাথাপছিু আয় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২৭৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বেশকিছু মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর চেয়েও এগিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও অধিক ব্যয়ে নির্মাণ করেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মাসেতু নির্মাণখাতে ২৯ শতাংশ, কৃষিখাতে ৯.৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে এই অঞ্চলের দারিদ্র্য ১ শতাংশ কমবে এবং জাতীয়ভাবে কমবে ০.৮ শতাংশ। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ১.৭ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে ০.৫৬ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে। এছাড়াও পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ঢাকা শহরের শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক স্বপ্ন মেট্রো রেল প্রকল্প নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প এখন বুক চিতিয়ে ঢাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান সরকারের আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধু টানেল। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল স্থাপিত হয় যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের আরও দুটি মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর। এই দুটি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সাবলম্বী হবে।
২০১৮ সালের ১১ মে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নামের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এর মধ্য দিয়ে ৬৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। তবে এই সাফল্যগাথার পাশাপাশি কিছু হতাশার দিকও রয়েছে। বিশেষ করে সর্বস্তরে দুর্নীতি মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। কিছু কিছু অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও মৌলবাদীদের আগ্রাসন বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করছে। অবশ্য সরকার শক্তভাবে এ সকল সমস্যা সমাধানে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে আরও আন্তরিক এবং জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।
যে বাংলাদেশকে এক সময় বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ সেই বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি উদয়মান অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন সরকার ঘোষিত ‘মিশন ২০৪১’ পূরণ হলে তা বাস্তবে রূপ নেবে। ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং অসংখ্য বুদ্ধিজীবীর রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম, সেই বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা ও শিল্প চর্চায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই বাংলাদেশের জন্যই হয়তো কবি লিখেছিলেন-
“সাবাস বাংলাদেশ,
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে ছাড়খার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।”