টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। সারি সারি হিজল-করচ গাছ, জীব-বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক স¤পদে ভরপুর ছিল এ হাওরটি। কিন্তু অপার সম্ভাবনাময় হাওরটি দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। হারাচ্ছে অতীত ঐতিহ্য। আইইউসিএন’র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ কমেছে, কমে গেছে জলজ উদ্ভিদ ও হিজল-করচ গাছ। মিঠা পানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির যে উদ্দেশ্য নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল তা আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা অনন্য এই প্রাকৃতিক জলাভূমি সংরক্ষণের নামে প্রকৃতি বিনাশ করে সরকারি ও দাতাদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
২০০০ সালে দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় টাঙ্গুয়ার হাওরটি। ২০০১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে হাওরটিকে হস্তান্তর করায় বাতিল হয় ইজারা প্রথা। ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় মাঠে নামে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আইইউসিএন হাওর রক্ষায় বিভিন্ন কাজে নিজেদের স¤পৃক্ত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাওর রক্ষক ভক্ষককে পরিণত হয়। তাদের অব্যবস্থাপনায় মাদার ফিশারিজ খ্যাত এ হাওরের মাছের উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ রক্ষা, স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি ও অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সুধীজন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। আমরাও সুধীজনের সঙ্গে এক মত। শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে হাওরের ‘হাঙর’দের মুখোশ উন্মোচন করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে হাওরবাসীর জীবন ও সম্পদ নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি করার সাহস না পায়। পাশাপাশি হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ হাওরকে রক্ষা করতে হলে হাওরবাসীকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।