1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ওরা আগুনে পোড়াতে চায় কাদের স্বপ্ন? : ড. মো. আনিসুজ্জামান

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

গোলা ভরা ধান, জারি সারি গান
মাছ ভরা পুকুর, অক্লান্ত দুপুর
পশু পাখি ডাকে, বাংলার বাঁকে
এভাবেই আছে বেশ, আমার বাংলাদেশ।
এই যে স্বপ্নের দেশটি খাদ্যে স্বয়ং স¤পূর্ণতা অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে গত এক যুগ ধরে, সেই দেশটির স্বপ্নের রথকে বার বার অনল দহনে ভস্মীভূত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন এক অগ্নিসন্ত্রাসের দল। এই দলটি নিজেদের প্রধান বিরোধী দল আখ্যায়িত করে বিভিন্ন অবান্তর দাবিতে বার বার রাজপথে নিতে চায় কথিত অবস্থান।
আদতে এই দলটি বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারার সকল বন্দোবস্ত স¤পূর্ণ করে বার বার প্রমাণ করে সরকারের নয় দলটি আসলে চলমান উন্নয়নের চরম বিরোধী দল। হরতাল-অবরোধে জনমানুষের ন্যূনতম সমর্থন না পেয়ে এই দলটি পোড়ায় বাস, টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাস্তা, আচমকা পেট্রোল বোমায় ভীত করে জনচলাচল, ঢিল ছুঁড়ে জানান দেয় তারা পঁচাত্তরের সেই ঘাতকদেরই প্রেতাত্মা। এই দলটির নাম বিএনপি এবং যাদের আরেক সঙ্গী সংগঠনের নাম জামায়াতে ইসলাম।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের যে শক্তি, মহান জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ কখনই তোয়াক্কা করেনি অগ্নিসন্ত্রাসীদের ব্যর্থ অপচেষ্টাগুলোকে। দুর্বার গতিতে বাংলাদেশকে ডিজিটাল হতে স্মার্ট যুগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু তনয়া। এরই একটি প্রধান অংশ খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জন।
খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা আনতে বর্তমান সরকার ২০০৮ এর নির্বাচনের পর হতেই নিয়ে আসছে নানামুখী পদক্ষেপ। যার মধ্যে রয়েছে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত কর্মসূচী, ধারাবাহিকভাবে কৃষিখাতে বিনিয়োগ, প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সরবরাহ, ভর্তুকি প্রদান, কৃষি গবেষণা খাতে গুরুত্ব আরোপ ইত্যাদি।
সরকারের সাথে উদ্যোগ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও। সহজ শর্তে ও বিনা জামানতে কৃষি ঋণ প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন, সুনির্দিষ্ট ফসল চাষে অর্ধেক সুদে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা, সবুজ কৃষির জন্য বিশেষ তহবিল গঠন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অর্থায়নের সুবিধা সৃষ্টি ইত্যাদি পদক্ষেপগুলোও বাংলার কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া করোনায় সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় দেশের কৃষি যখন পতিত হয় ভীষণ সংকটে তখন কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সরকারের নেয়া নানামুখী প্রণোদনা প্যাকেজের ভূয়সী প্রশংসা করতেই হয়।
এভাবে যে মাটিতে বীজ পড়লেই জাগে চারা গাছের প্রাণ, সেই মাটির উর্বরতাকেই ভিত্তি করে বর্তমান সরকার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান। কিন্তু যখন সরকার কৃষিবান্ধব পরিকল্পনায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তার অঙ্গীকার পালন করে যাচ্ছে, তখনই হরতাল-অবরোধের ডামাঢোলে বিএনপি-জামায়াত থামিয়ে দিতে চাচ্ছে খাদ্যের এই জয়যাত্রাকে।
দৈনিক প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল বিক্রি করা বিক্রেতা যখন গত ২১ দিনে দৈনিক মাত্র আধাকেজি ফল বিক্রি করে আহাজারি করে, তখন এর পেছনে দায়ী আগুন সন্ত্রাসীরা সেই আহাজারির উপর ভর করে ক্ষমতার দুরভিসন্ধি দেখে যায়। অবরোধের অত্যাচার সইতে না পেরে গরীব কৃষকটি যখন তার মাঠের আলু-পটল-কুমড়া-কপি বাজারের ঝুড়ির বদলে সংবাদ সম্মেলনের টেবিলে রেখে কান্না ঝড়ায়, তখনও সেই কান্নার পানিকে পেট্রোল বানিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি কৃষকেরই পণ্যের বাহনে আগুন ধরায়। ভাসমান খাবারের দোকান হতে সংসার চালানো ব্যবসায়ীটি যখন রাজ্যের হতাশা নিয়ে ক্রেতার অভাবে মাছি তাড়াতে তাড়াতে চাপড়ায় নিজের কপাল, তখনও বিএনপি-জামায়াত জনবিরোধী দল আগুনে পোড়াতে থাকে এক একটি সুন্দর সকাল।
হরতাল অবরোধে সারা দেশে কৃষি পণ্যের সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। পর্যাপ্ত পণ্য বাজারে না আসায় অধিক মূল্যে কেনা পণ্য দিয়ে তৈরি খাবারের দামও বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে এমনিতে খদ্দের ভাটা তো তৈরি হচ্ছেই, সাথে অবরোধের কারণে জনচলাচল বন্ধ হওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ীরা পোহাচ্ছে মরার উপর খাড়ার ঘা।
অবরোধে ভাসমান খাবার হোটেলগুলো দৈনিক গুণছে ৬০০ টাকার মত ক্ষতি যার পরিমাণ হোটেল-রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে সারাদেশে পাঁচ লাখের মতো হোটেল রেস্তোরাঁয় কাজ করে প্রায় ২০ লাখের মত মানুষ।
দৈনিক এ খাতে লেনদেন হয় ১০০ কোটি টাকা। অবরোধ-হরতাল এই বিশাল লেনদেনের পরিমাণ নামিয়ে এনেছে অর্ধেকেরও নিচে। যার ফলে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা বাধ্য হচ্ছেন পসার ঘুচিয়ে নিতে। পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও পরিবহন এবং ক্রেতার অভাবে নিজের চোখের সামনে বিক্রির জন্য প্রস্তুত পণ্যগুলোকে পঁচে যেতে দেখতে হচ্ছে। খরচ না কমায় বিক্রির এ অভাব আরও বিপদে ফেলে দিচ্ছে অসহায় ব্যবসায়ীদের। অথচ ওই সন্ত্রাসীরা ভুলে যায় এদেশের সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকের আহাজারি-অশ্রু যখন ফুরিয়ে যাবে, বাধ্য হয়ে অবরোধের বিরোধে যখন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের লাঙল-হাতিয়ার হাতে তুলে নিবে, তখন উল্টো এই আগুনেই সন্ত্রাসীদের পুড়তে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, ফিশারিজ এন্ড মেরিন সাইন্স বিভাগ এবং প্রক্টর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com