পত্রিকান্তরে একজন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি শুনেছেন যে, ভাড়া দিয়ে পয়সা দিয়ে লোক এনে আগুন-সন্ত্রাস করা হচ্ছে। আগুন-সন্ত্রাসীদের বরদাস্ত করা হবে না বলেও তিনি সুদৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন। তিনি আগুন-সন্ত্রাসী দেখলেই তাদেরকে ধরে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে সোপর্দ করার জন্যে দেশবাসীর প্রতি ডাক দিয়েছেন।
আগুন-সন্ত্রসী সম্পর্কে এবংবিধ প্রত্যয়-নির্দেশ প্রকাশের সুবাদে একটা সমাজসাংস্থিতিক সত্য প্রকটিত হয়েছে। সেটি হলো বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন এক গর্হিত স্তরে উপনিত হয়েছে যে, সেখানে সন্ত্রাস করার জন্যে লোকে সুপারি নিচ্ছে, অর্থাৎ ভাড়া খাটছে। অর্থাৎ এ দেশে ‘নাশকতা কিংবা খুন-খারাপি করা’ একধরনের পেশায় পরিণত হয়েছে এবং রাজনীতির মাঠে এই পেশায় নিয়োজিত লোকজনদের ব্যবহার করা হচ্ছে সুযোগ মতো। মিটিং-মিছিলে অংশ নেওয়ার বিনিময়েও লোকেরা টাকা চাইছে এবং পেয়েও যাচ্ছে। জায়মান রাজনীতির এইসব উপসর্গ প্রমাণ করে যে, এখানে রাজনীতির মান যথাসাধ্য নিচে নেমে গিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পর্যবসিত হয়েছে এবং রাজনীতি আর দেশের কল্যাণের জন্য নয় বরং ব্যক্তি বিশেষের কল্যাণে কার্যকর আছে। সবচেয়ে বড় কথা এখানে যে-কোনও সন্ত্রাসী কার্যক্রম অহিংসার বিপরীতে সহিংসতাকেই প্রকটিত করছে। এই সহিংসতা কেবল রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, এমন কি সেটা কোন কিশোরীকে দলধর্ষণের শিকারে পরিণত করে দৃশ্যমান হচ্ছে, সম্পদ আত্মসাৎ কিংবা খুনখারাপি তো কোন ছার।
এই সহিংসতা এমন একটি প্রপঞ্চ যা ব্যক্তি ও সমাজকে প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত করে এবং ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত কিংবা রাজনীতিক যে প্রকরণেরই হোক সন্ত্রাস সবসময়ই জবাবদিহিতাহীন ক্ষমতার প্রকাশ। সহিংসতা কেবল দৈহিক খুন-জখমই করে না, লোকসমাজের মানসিকতাকেও রক্তাক্ত করে।
সহিংসতা নিয়ে বহরে ব্যাপক প্রবন্ধ ফাঁদা যায়। আপাতত সে-চেষ্টা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেবল বলি, আমাদের দেশে সহিংসতা ইতোমধ্যে কাঠামোগত সহিংসতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় যে সহিংতাকে বরদাস্ত করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা চূড়ান্ত বিচারে কাঠামোগত সহিংসতারই উত্তম দৃষ্টান্ত। জনগণ এই সহিংসতাকে কীছুতেই বরদাস্ত করতে পারেন না। সেটা হাসপাতাল, ঔষধ, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণ, ভোগ্যপণ্য বিপণন, ভোটাধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি যতসব ক্ষেত্রে, যতো কীছুতেই সংঘটিত হোক না কেন।