ফিলিস্তিনের গাজায় তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী। নির্বিচারে তারা মানুষ হত্যা করছে। তাদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ৩ হাজার ৭৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৪৯৩ জন।
গেল ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় সশস্ত্র সংগঠন হামাস। জবাবে ইসরায়েল হামাস শাসিত গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালানো শুরু করে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতদের মধ্যে অন্তত এক হাজার ৫২৪ শিশু। এর মধ্যে এক হাজার নারীও রয়েছেন। প্রাণ গেছে ১১ সাংবাদিকের। আর আহতদের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার শিশু। আর নারীর সংখ্যা এক হাজার ৪০০।
এদিকে, হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০৩ ইসরায়েলির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ৩০৬ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্য, ৫৭ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আর নিখোঁজ প্রায় ১০০। আহত হয়েছেন চার হাজার ৬২৯ জন।
ইউনিসেফ বলছে, টার্গেট করা শিশুগুলো ছিল নিরস্ত্র এবং তারা ইসরায়েল রাষ্ট্র বা এর নাগরিকদের জন্য কোনো ধরনের হুমকিও তৈরি করছিল না। তাহলে কেন এভাবে নির্বিচারে শিশু হত্যা করছে। সমগ্র পৃথিবী এবারের বর্বরতা-নিষ্ঠুরতাকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে, যা সম্ভবত কখনো এমনভাবে দৃশ্যমান হয়নি।
লাগাতার ইসরায়েলি হামলার মুখে আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালকে নিরাপদ ভেবেছিলেন গাজাবাসী। নানা জায়গায় হামলা হলেও অন্তত হাসপাতালে হামলা হবে না- এমনটাই ভেবেছিলেন তারা। তাই অনেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ছিলেন আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। আরো ছিলেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১১ দিনে ইসরায়েল কয়েক হাজার টন বোমা বর্ষণ করেছে, বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স কিছুই রক্ষা পায়নি। তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। সর্বাত্মক অবরোধে গাজায় পানি নেই, জ্বালানি নেই, ওষুধ নেই। শিশুখাদ্য তো বটেই, সামগ্রিকভাবেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে গাজায়। লোকজন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছাড়ছেন। পথে তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা কেউ দেখতে চাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক। একই নীতি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার। আরব বিশ্বের নীতি-নির্ধারণে আমেরিকাই শেষ কথা। ইরান ছাড়া অন্য প্রায় সবাই ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনে ব্যস্ত। এ সংকট ১০০ বছরের পুরনো। সংকট নিরসনে কয়েকবার নেয়া হয়েছে শান্তি উদ্যোগ। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং দ্বন্দ্ব বাড়ছে। মীমাংসা হচ্ছে না। নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। সংঘাত নেপথ্যের একদিকে ইসরায়েলের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের মানুষের নিজ বাসভূমে নিরাপদে বসবাসের স্বপ্ন। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিরা বেশকিছু ইস্যুতে মোটেই একমত হতে পারছে না। এর মধ্যে আছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ব্যাপারে কী হবে; পশ্চিম তীরে যেসব ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো থাকবে, নাকি সরিয়ে নেয়া হবে; জেরুজালেম নগরী কি উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি হবে; আর সবচেয়ে জটিল ইস্যু হচ্ছে- ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্ন। গত ২৫ বছর ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে থেমে থেমে। ফিলিস্তিনের মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার ব্যাপারে ২২ সদস্যবিশিষ্ট আরব লিগও তেমন কোনো অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই সংঘাত শেষ হবে কীভাবে? কল্পনাতীত অস্থিরতা চলবে আর কতদিন? আর কত মানুষ প্রাণ হারাবে বুলেট-বোমার আঘাতে? এ অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলের বর্বরতা থামাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।